নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি
নন্দীগ্রাম
আ.লীগ নেতারা গা ঢাকা কর্মীরা বিএনপির আশ্রয়ে
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন একরোখা ও দাপুটে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর এসব স্থানীয় হেভিওয়েট নেতারা ফেরারী। পাশাপাশি কর্মীরা সব আশ্রয় নিয়েছে বিএনপির সেল্টারে। শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীরাই নয়, তাদের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়া হচ্ছেন।
ক্ষমতায় থাকার সময় স্কুল-কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য, চেয়ার দখল, সরকারি পুকুর ও হাট বাজারে ইজারা সিন্ডিকেট, জমি দখলসহ সবই ছিল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। দলটির নেতাদের অতিথি না করা হলে অনুষ্ঠান ভন্ডুল করে দেওয়া হতো। নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ করলে পেশাগত কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হত। প্রেস ক্লাব বিলুপ্ত করতে শুরু করেছিল নানা অপতৎপরতা। তারা নিজেদের লোক দিয়ে মিডিয়া সেন্টার নামে একটি সংগঠন গঠন করে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই দাপুটে নেতাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় অফিস জনশূন্য। আর আওয়ামী লীগ নেতার কাছের লোকজন, জাতীয় পার্টি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খোলস পাল্টে আশ্রয় নিয়েছে বিএনপির ছত্রছায়ায়। এখন তারা বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, দলে অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই।
সূত্র মতে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, যুগ্ম সম্পাদক মুকুল মিঞা, মুক্তারিন সরকারসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রথম সারির নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান অনেকটা আড়ালে দুদিন পর্যন্ত এলাকায় ছিলেন।
বেশকয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম ও বগুড়া সদরে আন্দোলনে হামলা, খুন, নাশকতাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। এরপর থেকেই নন্দীগ্রামের আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতাদের আর দেখা মেলেনি। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা পালিয়ে থাকলেও কিছু নেতাকর্মী এলাকায় ফিরেছেন। নেতাদের ব্যক্তিগত লোক হিসেবে পরিচিতরা খোলস পাল্টে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের ছত্রছায়া নেওয়ার চেষ্টা করছেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ডিজিটাল প্রচারকর্মী রিধইল গ্রামের মামুন আহমেদ এখন ছাত্রদলের জনৈক নেতার ছত্রছায়ায় আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা যুবলীগের এক নেতা জানান, নেতারা নিজেরা ইনকাম করেছে, পালিয়েও তাদের দিন ভালো যাচ্ছে। আমার পরিবার মানবেতর অবস্থায় ছিল। খুব শঙ্কার মধ্যেও বাড়িতে এসেছি। দল করা ছেড়ে ব্যবসা ও পেশার প্রতি মনোযোগ দিয়েছি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির পদের নেতারা খোলস পাল্টে বিএনপিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত ফেসবুকে বিএনপি নেতার হয়ে প্রচারণা করতে দেখা গেছে। চাকলমা গ্রামের রাকিব বাবু ওরফে রফিক উপজেলা যুব সংহতির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। কমিটির তালিকায় তার বাবার নাম কেরামত আলী উল্লেখ রয়েছে। বিএনপির নিয়মিত কর্মসূচি ও নেতাদের কার্যক্রম নিজের ফেসবুকে সক্রিয়ভাবে প্রচার করছেন রাকিব রফিক। নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে উল্লেখ করতেও দেখা গেছে। উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম নিজের ফেসবুকে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে প্রচারণা করছেন। উপজেলা জাপার যুগ্ম আহ্বায়ক ও সহযোগী সংগঠন শ্রমিক পার্টির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে গুঞ্জন চলছে। এছাড়া উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রউফ রুবেলকে একটি পক্ষ বিতর্কিত করতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফেসবুকেও চলছে অপপ্রচার।
বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। দলে ফ্যাসিস্টের দোসরদের জায়গা হবে না। সব সংগঠনের ইউনিটকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দলের দুঃসময়ে যারা রাজপথে ছিল, তারাই বিএনপির প্রাণ।
"