নিজস্ব প্রতিবেদক
মা মারা গেছেন, বাবা কারাবন্দি
অসহায় শিশুদের দেখভালে নির্দেশ
যমজ কন্যাশিশুর জন্মের এক সপ্তাহের মাথায় মায়ের মৃত্যু। তার কয়েকদিন পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবা কারাগারে। এ পরিস্থিতিতে আরো এক বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে ১৩ বছরের সাজ্জাদ চরম বিপাকে। এমন সংবাদ নজরে আনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেই শিশুদের দেখভালে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সমাজসেবা কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
তিন বোনকে নিয়ে ১৩ বছরের সাজ্জাদ চরম বিপাকে- এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদ আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। গত ৭ নভেম্বর তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চান এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই শিশুদের খাবার-দাবার ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আদেশ দেন। তিনি জানান, পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস যোগাযোগ করে আদালতকে জানায়, স্থানীয় প্রশাসন ওই শিশুদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। ওই শিশুদের অবস্থা সময়ে সময়ে তদারকি করে আদালতকে জানানো হবে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১৩ বছরের সাজ্জাদের কোলে ফুটফুটে এক কন্যাশিশু। ৭ বছরের ফারিয়ার কোলে আরেকজন। যমজ এ শিশুরা সাজ্জাদ-ফারিয়ার ছোট বোন। মাসখানেক আগে তারা পৃথিবীতে আসে। কিন্তু জন্মের এক সপ্তাহের মাথায় হারায় মাকে। বাবা বর্তমানে কারাবন্দি। দুই শিশুসহ ছোট তিন বোনকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে সাজ্জাদ। এ অবস্থায় চার শিশুই খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন পার করছে। ঘটনাটি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক মাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর ৭ দিন পর তার মৃত্যু হয়। এরপর চার সন্তানের লালন-পালন করছিলেন জামাল মিয়া। তার বড় ছেলে সাজ্জাদ এম এম খান উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত ৮ নভেম্বর রাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদার হত্যা মামলায় জামালকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় কোটালীপাড়া পুলিশ। পরে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয় জামালকে। পরে ৯ নভেম্বর জামালকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সাজ্জাদের চাচা মনির মিয়া বলেন, আমার ভাই বর্তমানে কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নন। একসময় আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পুলিশ কী কারণে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে জেলে পাঠিয়েছে, জানা নেই। তিনি আরো বলেন, ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া প্রথম শ্রেণিতে। এছাড়া এক মাস বয়সি আরো দুই মেয়ে আছে। তাদের সঙ্গে আমার বৃদ্ধ মায়ের দেখাশুনাও করত আমার ভাই। দ্রুত আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।
কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন জামাল মিয়া। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদার হত্যা ঘটনায় জড়িত। সেজন্য তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
"