প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

গণঅভ্যুত্থান গাথা

গুলিবিদ্ধ রাশেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন মা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে রাশেদের চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। তার পরিবার হতদরিদ্র। এখন এ পরিবারে নেমে এসেছে হতাশার কালো ছায়া। গত ৫ আগস্ট পুলিশের টিয়ার শেলে আহত বন্ধুর এক বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোলের মোড়ে সদর থানার ছাদের ওপর থেকে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হন পান সিগারেটের দোকানদার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। তার বাম চোখের ভেতরে গুলি ঢোকে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ভর্তি করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে।

রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৬) সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল নিউমার্কেট এলাকার মৃত শহিদুল ইসলাম (৬০) ও রাশিদা বেগম (৪০) দম্পতির ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জ উপজেলার সোনাতলা গ্রামে। দুই ভাইবোনের মধ্যে রাশেদ বড়। তার বোন ফাহিমা খাতুন (২৪) ছোট। বিবাহিতা বোন থাকেন তার শ্বশুরবাড়িতে। ছোটবেলায় রাশেদের বাবা মারা যান। এরপর তার মা শহরের বিভিন্ন হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে দুই ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন।

কিন্তু দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল মা সংসারের খরচ চালিয়ে তাদের আর লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ছেলে রাশেদকে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় অল্প পুঁজি দিয়ে একটি ছোট পান-সিগারেটের দোকান করে দেন। মা ও ছেলে দুজনের উপার্জনে তাদের সংসার চলছিল ভালোই। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখের জ্যোতি হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে রাশেদের পরিবার।

গুলিবিদ্ধ রাশেদ বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ওই দিন টিয়ার শেলের গুলিতে আহত এক বন্ধুর বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোলের মোড়ে উঠার পরপরই সদর থানার ছাদের ওপর থেকে পুলিশের ছোড়া একটি ছররা গুলি আমার বাম চোখে এসে লাগে এবং অপর একটি গুলি মুখে লাগে। এরপর স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ভর্তি করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর আমাকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। সেখানে দেখানোর পর আমার চোখে অপারেশন করে গুলি বের করার জন্য তারা এক থেকে দেড় মাস পরে যেতে বলেন। কিন্তু আমি চোখের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলাম না বলে ঢাকার বেসরকারি ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যান আমার মা। সেখানে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করে দুবার অপারেশন করেও আমার চোখ থেকে গুলি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা।

রাশেদ আরো জানান, বর্তমানে এই চোখ নিয়ে আমি ঠিকমতো দোকানদারিও করতে পারছি না। রোদের দিকে তাকালে চোখে যন্ত্রণা বেশি হয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।

রাশেদের মা রাশিদা বেগম জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় আমার দুটি সন্তান খুবই ছোট ছিল। তখন থেকে ভীষণ কষ্ট করে লোকের হোটেলে কাজ করে তাদের মানুষ করেছি। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছি। আর ছেলেটিকে অল্প পুঁজি দিয়ে একটি পান-সিগারেটের দোকান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছেলে আমার চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুবই অসুস্থ এখন। তাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে অনেক টাকা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। কিন্তু এতে তার চোখ এখনো ভালো হলো না। ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাব সে টাকাও এখন নেই।

তিনি এ সময় আক্ষেপ করে বলেন, আজ পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য কেউ কোনো অনুদান দেয়নি। একটি টাকাও সাহায্য করেনি। কী করবেন এখন তিনি তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি এ সময় সরকারের কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানান।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছে তাদের সবারই তালিকা তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকার সমন্বয়ক আরাফাত ও মুজাহিদকে নিয়ে আহত ও শহীদদের নাম কালেক্ট করে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে একটি ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হবে। তবে, এ তালিকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের সবারই নাম রয়েছে। তালিকা প্রস্তুত হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close