নোয়াখালী প্রতিনিধি
গণঅভ্যুত্থানগাথা
পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা তামিমের স্বপ্ন
সামান্য সহায়তা পেলেও শহীদ পরিবারটির খোঁজ নেয় না কেউ
১৯ জুলাই শুক্রবার খাওয়ার পর বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে বাসা থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে যোন দেন আহসান হাবিব তামিম। ওইদিন সন্ধ্যায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। সন্ধ্যায় তামিমের সহযোগিদের কাছ থেকে খবর পায় তার বাবা-মা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ আহসান হাবিব তামিমের স্বপ্ন ছিল সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ার। পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে তার সেই স্বপ্ন।
তামিম নোয়াখালী জেলার চাটখিলের ১নং সাহাপুর ইউনিয়নের পূর্ব শোশালিয়া গ্রামের আমজাদ মুন্সীবাড়ীর মো. আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ১ম বর্ষের (সম্মান) ছাত্র ছিলেন।
বৈষমবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মিরপুর ১০নং গোল চত্বরে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে সহযোগীরা পাশর্^বর্তী আলহেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় ডাক্তার। সে অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের ডান পাঁজরের নিচ ও বাম হাত গুলিবিদ্ধ হয়।
তিন ভাইয়ের মধ্যে তামিম ছিলেন দ্বিতীয়। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারও শিখতেন। মাঝে মধ্যে তার বাবাকে অটো-মেকানিক্সের কাজে সহযোগিতা করতেন। বড় ভাই আরমান হোসেন তার বাবার সঙ্গে অটো মেকানিক্সের কাজ করেন। ছোট ভাই রায়হান (৪) এখনো শিশু। মা রাজিয়া সুলতানা (৩৫) গৃহিণী। পরিবারের সবাই ঢাকায় বসবাস করেন।
তামিমের বাবা আবদুল মান্নান (৪৫) ব্যবসায়ী। ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর ৫৬ সেনপাড়া এলাকায় তার মোটর মেকানিক্সের ব্যবসা রয়েছে। তিনি জানান, তামিমের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বড় সরকারি কর্মকর্তা হবে। বাবা-মার দুঃখ কষ্ট লাঘব করে তাদের মুখে হাসি ফোটাবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সফল হয়েছে। কিন্তু তার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তামিম মেধাবী ছাত্র ছিল। তার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল, কোটা প্রথা বাদ না হলে, যত ভাল লেখাপড়া করুক না কেন এ দিয়ে কোন কাজে আসবে না। কোটা প্রথা বাতিল হলে মেধাগুণে একটা ভালো সরকারি চাকরি হবে। চাকরি হলে বাবা-মার দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। তাদের মুখে হাসি ফুটবে। তার সে স্বপ্ন পূরণ হল না। পুলিশের গুলিতে সব শেষ হয়ে গেলো।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সকালে তামিম আন্দোলনে অংশ নিয়ে পরে দুপুরে বাসায় এসে নামাজ পড়ে এবং খাবার খায়। এ সময় তার বাবা-মা তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্ত খাবার পর বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে সে আন্দোলনে যোগ দেয়। সন্ধ্যায় সহযোগীরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানায় তার বাবা-মাকে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে তামিমের বাবা-মা তাদের ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে লাশ চাটখিল উপজেলার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
তামিমের মৃত্যুর পর তার পরিবার সরকারিভাবে ৫০ হাজার টাকা এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পায়। তবে অন্য কেউ তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি যাদের আহ্বানে আন্দোলনে গিয়ে তামিম শহীদ হয়েছেন, তারাও কোন খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ করেন বাবা আবদুল মান্নান।
"