বাকৃবি প্রতিনিধি

  ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

গবাদিপশুর গর্ভপাত প্রতিরোধের টিকা

বাকৃবিতে উদ্ভাবন

গবাদিপশুর গর্ভপাতের জন্য দায়ী রোগ ব্রুসেলোসিসের টিকা উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম এবং তার গবেষকদল। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (বিএএস-ইউএসডিএ)।

অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জুনোটিক রোগের (প্রাণীর থেকে মানুষে ছড়ায়) ক্ষেত্রে বোভাইন যক্ষ্মার পরই ব্রুসেলোসিসের অবস্থান, যা দেশের নীতিনির্ধারক কর্তৃক স্বীকৃত। ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত গরু, ছাগল, ভেড়া গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ছয় মাস পর সাধারণত গর্ভপাত হয়ে থাকে। ফলে খামারি একই সঙ্গে বাছুরটিও হারায় এবং গাভির দুধের উৎপাদনও কমে যায়। ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে দেশের প্রায় ৫-৬ শতাংশ গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এতে পশু মারা না গেলেও প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। যদি মানুষ ব্রুসেলায় আক্রান্ত হয় তাহলে তার কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়।

এই অধ্যাপক আরো বলেন, ক্লিনিক্যাল ও ফিল্ড ট্রায়ালের মাধ্যমে আমরা টিকাটি তৈরি করেছি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আমরা ল্যাব প্রাণীতে (সাদা ইঁদুর) টিকাটি প্রয়োগ করেছি এবং সফলতা পাওয়ার পর ফিল্ড ট্রায়ালের জন্য ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের প্রায় ৪০০ গাভির দেহে টিকাটি প্রয়োগ করি এবং পরবর্তীতে ওই গাভিগুলোর অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারি ব্রুসেলোসিসের বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত টিকাটি যথেষ্ট কার্যকর। ব্রুসেলা অ্যাবোরটাসের বায়োভার-৩-এর বিরুদ্ধে উদ্ভাবিত টিকাটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে অন্যান্য বায়োভারের বিরুদ্ধেও ইহা প্রতিরক্ষা দেবে অ্যান্টিজেনিক মিল থাকার কল্যাণে।

অধ্যাপক আরিফুল আরো জানান, আমাদের তৈরি টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এবং তৈরি টিকাটি মৃত টিকার অন্তর্ভুক্ত। টিকাটির আনুষঙ্গিক খরচের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ফান্ডিং পেলে টিকাটির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। টিকার ফর্মুলা তৈরি আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চায় তাহলে আমরা টিকাটি তৈরি করে তাদের সরবরাহ করতে পারব। টিকাটির জন্য গবাদিপশু প্রতি খরচ পড়বে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বুস্টার ডোজের জন্যও একই খরচ পড়বে। প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর বুস্টার ডোজ দিতে হবে। প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল হক ও তার গবেষকদল ২০১৬ সালে দেশে সর্বপ্রথম গবাদিপশুর দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি নির্ণয় করেছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close