প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ভাঙনে সর্বস্বান্ত যমুনাপাড়ের মানুষ
মাদারীপুরে বালু উত্তোলনে বাঁধে ধস
সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে দিনমজুরে পরিণত হচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষ। অন্যদিকে, মাদারীপুরের শিবচরের বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের কলাতলা এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদে ড্রেজারে বালু তোলায় বেড়িবাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নদের পাড়ের মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের যমুনার কুল ঘেঁষা সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা আয়নাল ব্যাপারীকে এখন সংসার চালাতে হয় দিনমজুরি খেটে। সরেজমিনে সৈয়দপুর কবরস্থান এলাকায় গেলে যমুনার পাড়ে বসে থাকতে দেখা যায় আয়নাল ব্যাপারীকে। জানতে চাইলে তিনি যমুনার মাঝামাঝি দিকে আঙুল তুলে বলেন, ওই যে যমুনার মাঝ বরাবর জায়গায় আমাদের গ্রাম ছিল, সেই গাঁয়ের পুবের মাথায় ছিল আমাদের বাড়ি। তিন বিঘার ওপরে চাষের জমিও ছিল। কয়েক বছর ধরে ভাঙতে ভাঙতে সব এখন যমুনার পেটে। এখন আমি নিঃস্ব, ওয়াপদা বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। পরের জমিতে জন খেটে সংসার চালাই। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, তিন ছেলেও বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। শুধু বুড়া-বুড়ি থাকি।
একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার ওপর বাড়ি করেছেন জয়ান মোল্লা, মকরম ফকির, আবদুস সালাম ও সোনাউল্লাহ, ফটিক আলী, বাবলু শেখ, ওয়াহেদ আলী শেখ, রায়হান মোল্লা ও আবদুল মোতালেবের। তাদের জীবনের গল্পও আয়নাল ব্যাপারীর মতো। তারাও দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালান। যমুনার ভাঙনে আবদুস সালামের দেড় বিঘা ও সোনাউল্লাহর ৫৫ শতক জমি কয়েক মাসের মধ্যেই চলে গেছে। এ বছরের ভাঙনেই বাড়ি ও জমি হারিয়েছেন ফটিক আলী মন্ডল, বাবলু শেখ, ওয়াহেদ আলী শেখ, রায়হান মোল্লা, আবদুল মোতালেবসহ দেড় শতাধিক মানুষ।
নদীভাঙনে ভুক্তভোগীরা বলেন, ১৫ বছর ধরে এ অঞ্চলে চলছে ভাঙন। চার বছর আগে ভাঙনরোধে সরকার বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু বাঁধের কাজ শুরু করার পর দফায় দফায় বন্ধ করা হয়। চলতি বছরেই একটি স্কুল, এক হাজার বিঘারও বেশি কৃষিজমি ও ৪০০-এর বেশি বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে। এখন কবরস্থান ভাঙনের মুখে রয়েছে। নদী রক্ষা আন্দোলন শাহজাদপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. ফারুক রেজা বলেন, আমাদের দাবির মুখে গত কয়েক বছর আগে এনায়েতপুর থেকে হাঁট পাচিল পর্যন্ত নদী তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প পাস হয়। কাজ শুরু হয়েও অদৃশ্য কারণে প্রকল্পটি বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান জানান, ২০২১ সাল থেকে সেখানে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। ঠিকাদাররা কিছু কিছু পয়েন্টে ব্লক তৈরি করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত ব্লক তৈরি না হওয়ায় তারা মাঠে নামেনি। জুন মাস পর্যন্ত যে প্রোগ্রেস হয়েছে তাতে ৫০ শতাংশ ব্লক ও জিওব্যাগ তৈরি করে ফেলা হয়েছে। এ বছর দৃশ্যমান একটা অগ্রগতি হবে। দু-একজন ঠিকাদার যারা কাজ শুরু করেনি, তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে যাতে কাজ শুরু করে। তারা কাজ শুরু না করলে কন্ট্রাকের রুল অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিবচর (মাদারীপুর) : শিবচর উপজেলাকে রক্ষার জন্য প্রায় ৩৮১ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে সেই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭০ কোটি টাকায় নদী ড্রেজিং এবং ২১১ কোটি টাকার তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করে খুলনা শিপইয়ার্ড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি চলমান রয়েছে। এর মধ্যে বহেরাতলা ইউনিয়নের ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়। আর সেই অংশেই হঠাৎ ধসে পড়ে। বাঁধের প্রায় ২৫ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অসাধু ড্রেজার ব্যবসায়ীরা ওই বাঁধে চারপাশে প্রায় ৪-৫টি ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত বালু তুলত। বাধা দিলে রাতের অন্ধকারে গোপনে বালু তুলে নিত। নদ থেকে বালু তোলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্থানীয়রা জানায়, শিবচর উপজেলার বহু মানুষ নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এই বাধকে কেন্দ্র করে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তারা। কিন্তু হঠাৎ বাধ ধসে আবারও ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন। তাই বাধ ধসের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিবচরবাসীর।
বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য ছাইদ উকিল বলেন, তিন বছর আগের বেড়িবাঁধটি সত্যিই ভেঙে গেছে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনা দরকার। মাদানীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ড্রেজারে মাটি কেটে নেওয়ায় বেড়িবাঁধটি ধসে গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
"