গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
এখনো ঘানি টানেন জহুরুল-মিনা দম্পতি
এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে যখন সব কাজ যন্ত্র নিজেই চিন্তা করে দ্রুত ও নিখুতভাবে সম্পন্ন করছে, সেই যুগে সেই সনাতন পদ্ধতিতে ঘানি টেনে সরিষা থেকে তেল বের করছে জহুরুল-মিনা দম্পত্তি। তারা সংসারের ঘানি টানছেন না বরং ৩৮ বছর ধরে ঘানি টেনেই দিন কোনো রকমে দিন পার করছেন তারা। জহুরুল ইসলামের (৫৬) বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের কালিয়াবিল গ্রামে। তিনি মৃত রফাত আলী প্রামাণিকের ছেলে। চাষাবাদের জমি নেই, জরাজীর্ণ বসত ভিটায় ভাঙা ঘরে তার বসবাস।
পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী মিনা বেগম, এক মেয়ে ও তিন ছেলে। তেলের ঘানি টেনে যা আয় হয়, তা দিয়ে চালায় সংসার। সংসারের যাবতীয় খরচ চলে এ আয়ের ওপর। এরই মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি।
এই অমানসিক পরিশ্রমেই ঘোরে তাদের সংসারের চাকা। কড়ি কাঠের তৈরি কাতলার ওপর প্রায় ২০০ কেজির পাথর বসিয়ে ঘাড়ে জোয়াল বেঁধে এই ঘানি টানেন তারা। ঘানির টানে ডালার ভেতর সরিষা পিষ্ট হয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় তেল চুইয়ে চুইয়ে পড়ে নিচে রাখা পাত্রে। স্থানীয় হাটে এই তেল বিক্রি করেই চলে সংসার। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই জীবন সংগ্রাম।
হতদরিদ্র জহুরুল প্রামাণিক ও মিনা বেগম দম্পতির জমি বলতে ওই বাড়ির ভিটেটুকুই। বংশপরম্পরায় তারা এই পেশা এখনো ধরে রেখেছেন।
সম্প্রতি ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জহুরুলের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ৩৮ বছর ধরে আমি ও আমার স্ত্রী মিলে ঘানি টেনে খাঁটি সরিষার তেল বের করে বাজারে বিক্রি করি। সামান্য আয় দিয়েই কষ্ট করে চালাতে হয় সংসার। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ঘানির গরুটিও বিক্রি করতে হয়েছে আমাকে। স্ত্রীসহ কষ্ট করে ঘানি টানলেও লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতিনি।
স্ত্রী মিনা বেগম বলেন, আগে গায়ের জোরে ঘানি টানতাম। এখন বয়স হয়েছে। তাই ঘানি টানতে কষ্ট হয়। কিন্তু এ ছাড়া উপায়ও নেই। তিনি আরো বলেন, বিয়ের পর থেকেই কাঠের ঘানি টানছেন। কাজটি কঠোর পরিশ্রমের।
আবদুল হামিদ নামে এক প্রতিবেশী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই প্রথম আপনি তাদের খোঁজ-খবর নিতে এসেছেন। জীবিকার সন্ধানে একটি গরু ও একটি থাকার ঘরের দাবি জানান তিনি। জহুরুলের পড়শি শিক্ষক আবদুল বাতেন তালুকদার ও অপর একজন বয়োবৃদ্ধ তালেব সরকার বলেন, এ যুগেও ঘানি টেনে সংসার চালাতে হয়-এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা সমাজের বিত্তবান ও দাতা সংস্থাকে আহ্বান জানাবো। এই অসচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানান, আমি আগে জানতাম না। বিষয়টা খুবই অমানবিক। আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম। তারা যদি আবেদন করে তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
"