সিলেট প্রতিনিধি
মজুরি বন্ধ ৬ সপ্তাহ
শ্রমিক আন্দোলনে অচল ১৮ চা বাগান
সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে একযোগে আন্দোলন করছেন চা শ্রমিকরা। সিলেটে এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলো হলো- লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগান। ছোট-বড় মিলিয়ে সরকারের ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন ১৮টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। বকেয়া মজুরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন তারা। আন্দোলনের কারণে গত ৭ দিন ধরে অচল হয়ে পড়েছে ১৮ চা বাগান। বন্ধ রয়েছে এসব বাগানের উৎপাদন।
একই দাবিতে গতকাল রবিবার দুপুরে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকরা। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। পরে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। দুই দিনের মধ্যে বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা। এ ছাড়া আগামী দুদিন আন্দোলন বন্ধ থাকলেও, কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান শ্রমিকরা।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির সব পরিচালক পদত্যাগ করেন। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানির সব বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও মজুরি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাগান শ্রমিকরা। মাত্র ১৭৮ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা, ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এরপর বকেয়া মজুরির দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন এনটিসির মালিকানাধীন বাগানগুলোর শ্রমিকরা। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে একযোগে আন্দোলন করছেন তারা। সিলেটে এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলো হলো- লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগান। দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে এনটিসির ১৮টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। সবগুলো বাগানেই বকেয়া মজুরির দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, গত দুর্গাপূজার আগ থেকেই তাদের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পূজার সময়ে বোনাস দেওয়া হলেও, দেড় মাসের মজুরি বকেয়া রয়ে গেছে। সিলেটের দলদলি চা বাগানের শ্রমিক সজিব মুন্ডা বলেন, ‘যে টাকা মজুরি পাই, তা দিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে সংসারই চালাই। এরমধ্যে দেড় মাস ধরে মজুরি বন্ধ থাকলে আমরা খেয়ে বাঁচবো কী করে? দোকানে বাকির টাকা বাড়ছে। এখন দোকানদারও বাকি দিতে চায় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।’
লাক্কাতুরা বাগানের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, আন্দোলনের শুরুতে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে বকেয়া মজুরির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এ পর্যন্ত আর কোনো সহায়তা পাননি তারা। রবিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দুইদিনের আল্টিমেটাম দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি নিজেও এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক। রাজু বলেন, ‘আমাদের দেড় মাসের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। মজুরি না পেয়ে লক্ষাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’ তিনি বলেন, ‘কে সরকারে আসল বা গেল তা নিয়ে নিরীহ চা শ্রমিকদের কিছু আসে যায় না। আমরা কোনো রাজনীতিতে নেই। আমরা শুধু আমাদের মজুরি চাই।’
লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহিদ বলেন, ‘শ্রমকিদের মতো আমরা নিজেরাও সমস্যায় আছি। আমাদেরও বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তবে শুনেছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ ন্যাশনাল টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক বলেন, ‘কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’
"