নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
বাসভাড়া কমানোর দাবিতে হরতালের ডাক
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে পরিবহনে নৈরাজ্য
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া কমানোর দাবিতে হরতালসহ ৯টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নামে নারায়ণগঞ্জের একটি নাগরিক সংগঠন। গতকাল শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির কথা জানান সংগঠনটির আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।
এ রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করারও দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। বাসভাড়া কমানোর দাবিতে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দাবি মানা না হলে আগামী ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতালেরও ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
বর্তমানে এ রুটে বন্ধন, উৎসব, গ্রীন ঢাকা, আসিয়ানসহ কয়েকটি পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। এসব পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া ৮০ এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫ টাকা। রফিউর রাব্বি বলেন, যুগের পর যুগ ধরে সারা দেশে গণপরিবহন নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি বহাল রয়েছে। সরকার বদলালেও অরাজকতা দূর হয় না। সরকার তাদের দলীয় লোকজনকে অনৈতিক সুবিধা দিতে এ সেক্টরে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যে সিন্ডিকেট বছরের পর বছর সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে এ অরাজকতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাসিনা সরকার পরিবহন মালিক ও মাফিয়াবন্ধব ছিল, মন্তব্য করে রাব্বি বলেন, নিজেদের দলীয় ক্যাডার ও আত্মীয়-স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে সবসময় কিলোমিটারপ্রতি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে অযৌক্তিকভাবে। সরকারের এ গণবিরোধী নীতির সঙ্গে মিল রেখে পরিবহন মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) জনগণের স্বার্থ অবজ্ঞা করে বিভিন্ন স্থানের ভাড়া নির্ধারণ করে গেছে।
গত ২ এপ্রিল বিআরটিএ ঘোষিত দূরত্ব প্রতি ভাড়ার তালিকা ‘জনবিরোধী ও পরিবহন মালিকবান্ধব’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিআরটিএর হিসাবে এ রুটে ভাড়া দাঁড়ায় ৫৩ টাকা। কিন্তু বাস্তবিকভাবে নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া কোনোভাবেই ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। বিআরটিএর ত্রুটিপূর্ণ প্রজ্ঞাপনেই অনিয়ম লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দেখিয়ে (২.৩২ টাকা কিলোমিটার প্রতি) ভাড়া দেখানো হয় ৪৫ টাকা। ফ্লাইওভার টোল ৫ টাকা ও সানারপাড় ইউটার্ন ৩ টাকা দেখিয়ে বলা হয়, এ রুটে ভাড়া ৫৩ টাকা। কিন্তু একই শিটে বলা হয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ভাড়া হবে ৫৪ টাকা। বাস্তবিক দেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভাড়ার থেকেও যে ২ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিকারে প্রশাসন বা বিআরটিএর কোনো উদ্যোগ নেই। প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠলে ভাড়া ৫৩ টাকা, চাষাঢ়া থেকে উঠলে ৫০, নতুন কোর্ট এলাকা থেকে উঠলে ৪৮, শিবু মার্কেট থেকে উঠলে ৪৫ এবং জালকুড়ি থেকে উঠলে ৩৯ টাকা। কিন্তু সব জায়গা থেকেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা করে। প্রজ্ঞাপনে মতিঝিল শাপলা চত্বর ঘুরে দূরত্ব দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার। কিন্তু বাস্তবতা যাচ্ছে কোনো বাসই এখন শাপলা চত্বর ঘুরে যাতায়াত করে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি মো. নুরুদ্দিন, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, বাসদের সদস্য সচিব আবু নাঈম খান প্রমুখ।
"