প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থান গাথা
ক্ষণজন্মা বীর আবু সাঈদের কথা জাতি কখনো ভুলবে না
পৃথিবীর ইতিহাস বলে, ক্রান্তিলগ্নে জাতিকে উদ্ধারে কোনো না কোনো একজন ক্ষণজন্মা বীর জন্ম নেন। আবু সাঈদ তেমনই একজন বীর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে যিনি স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার জীবন বিলিয়ে দেওয়া আন্দোলনের গতিকে বদলে দিয়েছিল তুমুলভাবে। সারা দেশের ছাত্র-জনতা তার জীবন উৎসর্গকে তাদের আন্দোলনের পাথেয় করে নিয়েছিলেন। এ জাতি আওয়ামী লীগ সরকারকে স্বৈরাচার হিসেবেই গণ্য করেছে। আর সেই স্বৈরাচার সরকার সাধারণ জনগণের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুম, খুনসহ এক দুঃসহ দুঃশাসন কায়েম করেছিল।
এ দেশের মানুষ যখন প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল, ঠিক তখনই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ নিজের জীবন উৎসর্গ করে এই প্রজন্মের এক ক্ষণজন্মা ও অকুতোভয় বীর হিসেবে আন্দোলনে তীব্র গতির সঞ্চার করেন। পীরগঞ্জের বাবনপুর নামক প্রত্যন্ত পল্লীর এক দরিদ্র পরিবারে ২০০১ সালে আবু সাঈদের জন্ম হয়। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন এবং মা মনোয়ারা বেগম। নয় ভাই-বোনের অভাবের সংসারে শুধু আবু সাঈদেরই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
গত ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন আবু সাঈদ। সৃষ্টি করেন আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার এক অনন্য নজির।
বেরোবিতে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ আবু সাঈদের অকুতোভয় নেতৃত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বর্তমান প্রভাব সম্পর্কে বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নানা মন্তব্য তুলে ধরেন।
শহীদ আবু সাঈদের অচেনা লোকে পাড়ি জমানোর পরে মহাকালের গর্ভে ইতিমধ্যে তিন মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। বেরোবিতে আবারও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও ফেরেননি শুধু আবু সাঈদ। ক্লাসে বসেও তার সহপাঠীরা শোকাতুর মনে আবু সাঈদের কথা স্মরণ করছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন, ‘আবু সাঈদরা প্রতিদিন জন্মায় না। তারা ক্ষণজন্মা। কালে কালে জাতির মুক্তির জন্য আবু সাঈদরা একজন করেই জন্মায়। নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে যে জাতিকে উদ্ধার করে, সে সাধারণ কোনো মানুষ নয়। আমি মনে করি, তার মহাকাব্যিক বীরত্বগাথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবে।’
শওকত আলী বলেন, আবু সাঈদ নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিলেন। স্নাতক শেষপর্যায়ে এসে জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পরীক্ষাতেও ইংরেজি বিভাগে সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ৩.৩০ পেয়ে মেধা তালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছেন। এতেও প্রমাণিত হয় তিনি মেধাবী ছিলেন।
উপাচার্য আরো বলেন, ‘আমি জেনেছি, শহীদ আবু সাঈদ যেমন মেধাবী ছিলেন, ঠিক তেমনি ছিলেন বিনয়ী। সহপাঠীরা সবাই তাকে এখন গর্বভরে স্মরণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাঈদের ১৬ জুলাই শাহাদতবরণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে আবু সাঈদের অনুপস্থিতি সহ্য করতে পারছিলেন না। আবু সাঈদের অনুপস্থিতির কারণে ভারাক্রান্ত সবার মাঝে শোকের ছায়া দেখতে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, আবু সাঈদের পরিবার ও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে তার নামে একটি আবাসিক হল নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নম্বর গেটটি শহীদ আবু সাঈদ গেট নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ আবু সাঈদের ছোট বোন সুমি খাতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভাইয়ের ইংরেজি বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের দ্রুত এবং ন্যায়বিচার চেয়েছে। এই বিষয়ে গঠন করা তথ্যানুসন্ধান কমিটি ইতিমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভা-পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরেছি। কিন্তু আমাদের ভাই শহীদ আবু সাঈদ আর কখনোই ক্লাসে ফিরবেন না। তাকে ছাড়া বিভাগে এসে ক্লাস করে কতটা শূন্যতা অনুভব করি, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। দুই হাত টান করে বুক চিতিয়ে দেওয়া আবু সাঈদকে কাছ থেকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেই দৃশ্য মনে হলে কিছুটা নিস্তব্ধ ও নির্বাক হয়ে যাই।
অন্যান্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর মতো ১৬ জুলাই আবু সাঈদের সঙ্গে থাকা বেরোবির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্র এবং সংবাদকর্মী তাওহিদুল হক সিয়াম বলেন, আবু সাঈদ অত্যন্ত সাহসী, দৃঢচেতা এবং অন্যরকম একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। পুলিশের বেপরোয়া রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিবর্ষণের সময় তার হাতে শুধু একটা সাধারণ লাঠি ছিল। তিনি সরে যাননি, কাঠের ব্রিজের পাশেই ছিলেন। এ সময় ৫/৬ জন পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে বেধড়ক নির্যাতন ও রক্তাক্ত করে।
সিয়াম বলেন, ‘আমি আবু সাঈদকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। তখনো পুলিশ গুলি শুরু করেনি। এ সময় স্বৈরাচারের দোসর বেরোবির শিক্ষক আসাদ মন্ডল ও মশিয়ার রহমান, কর্মকর্তা আবুল কালাম, তাপস কুমার ঘোষ, কর্মচারী নুরুন্নবী, জনি ও নুর আলমসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের প্রতি ইটপাটকেল ছোড়ে এবং গালাগাল করে। এ সময় সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ সরেননি। অতি কাছে থেকে পুলিশ সাঈদকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি করতে থাকে। আবু সাঈদ লুটিয়ে পড়েন। অন্যান্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমিও তাকে সরিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশ আবারও গুলি ছোড়ে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৬০টি ছররা গুলি ঢোকে। আবু সাঈদকে অন্যান্য শিক্ষার্থী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় আমার পাশে থাকা শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলভী আমাকেও ওই হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি সেখানে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ইতিমধ্যেই শহীদ হওয়া আমার ভাই আবু সাঈদের লাশসহ আরো ১৫/১৬ জন আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে পাই। তখন আমি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে হাসপাতাল ত্যাগ করি। আবু সাঈদের বীরোচিত আত্মত্যাগ আমাদের আন্দোলন বেগবান করতে আরো সাহস জোগায়।’
বেরোবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বাংলা বিভাগের ছাত্র শামসুর রহমান সুমন বলেন, ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তখন চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মুহূর্তেই সারা দেশে এক অজেয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি করে। আন্দোলনটি পরিণত হয় ছাত্র-জনতার এক গণবিস্ফোরণে। প্রকম্পিত হয় স্বৈরাচারের ভিত্তি। এর তিন সপ্তাহের মধ্যেই ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর রোষানল থেকে নিজেকে বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় জাতির দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ ভাইয়ের অসাধারণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিনিয়ত বেগবান করে তোলে। অর্থসংকট থাকায় তিনি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুটি টিউশনি করতেন। তিনি সব বিষয়ে অনেক তথ্য জানতেন। প্রতিটি মিছিল-মিটিং সুচারুরূপে সংগঠিত করতেন। অসাধারণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতা দিয়ে তিনি সবাইকে উজ্জীবিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সফল করতে সাহস জোগাতেন।’
বেরোবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদ শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তার দেওয়া নির্দেশনায় আমি সহপাঠীদের সহযোগিতায় ছাত্রী হলে নারী শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করি।’
সাবিনা বলেন, ‘আবু সাঈদ প্রায়ই বলতেন, আমরা দাবি আদায় করেই ছাড়ব। তার একটা দৃঢ় সংকল্প ছিল, যা সবাইকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আরো উজ্জীবিত করত।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের একই গ্রামের বাল্যকালের সহপাঠী মাহিদ হাসান শাকিল বলেন, ‘আবু সাঈদ সব সময় বিপদ-আপদে সবার পাশে থাকতেন। যেকোনো বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। কিন্তু আবু সাঈদ আজ আমাদের মাঝে নেই। তার সেই বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য মনের কোণে বারবার ভেসে ওঠে। হৃদয়টা হাহাকার করে ওঠে।’
বেরোবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সিএসই বিভাগের ছাত্র মো. রহমত আলী বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদতবরণের পর ক্যাম্পাসে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। শুরু থেকে আন্দোলনে সফল নেতৃত্বদানকারী আবু সাঈদ ভাইকে হারিয়ে তার অনুপস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। পুলিশ, বেরোবি এবং মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করে। ১৭ জুলাই আমরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে ২ নম্বর গেটের কাছে শহীদ আবু সাঈদ ভাইয়ের গায়েবানা জানাজার ব্যবস্থাও তাতে অংশ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ ভাইয়ের শাহাদতবরণের পরে ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তার অনুপস্থিতিতে জুলাইয়ের ১৮ এবং ১৯ তারিখে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাবের আক্রমণাত্মক টহল, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকির মধ্যে এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আন্দোলন চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বেরোবিসহ গোটা শহরে হাজারো ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হন। এরপর ২০ জুলাই কারফিউ জারি করা হয়।’
রহমত বলেন, ‘আবু সাঈদের আত্মত্যাগ আমাদের উজ্জীবিত করেছে। আমরা সাক্ষাত মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই আন্দোলনে শরিক থাকি। আবু সাঈদের দেখানো পথে আমরা সাহসিকতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাই। আমরা রাজপথ ছাড়িনি। অবশেষে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।’
কেন আবু সাঈদ শাহাদতবরণের পূর্বে দুহাত দুদিকে উঁচিয়ে পুলিশের গুলির মুখে দাঁড়িয়েছিলেন, জানতে চাইলে বেরোবির শিক্ষার্থী বায়েজিদ বিন রশিদ, ইমন আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা ইয়াসমিন, শামসুর রহমান সুমন, রহমত আলী এবং নাহিদ হাসান শাকিল তাদের মন্তব্য জানান।
তারা বলেন, দীর্ঘ সময় আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন আবু সাঈদ। গত ১১ জুলাই মিছিল বের করার সময় আবু সাঈদকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেরোবির ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম এবং ছাত্রলীগের মাসুম দফায় দফায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। কিন্তু আবু সাঈদ ছিলেন অটল ও দৃঢ়চেতা। তিনি এসবের কিছুই পরোয়া করেননি। বরং আন্দোলনের সফলতা অর্জনের ব্যাপারে ছিলেন চরম আত্মবিশ্বাসী। নেতৃত্বের দায়ভার এবং একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের প্রহসনকে পরাজিত করে ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে আত্মত্যাগেও প্রস্তুত ছিলেন সাঈদ। তাই তিনি এভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন বলে তারা মনে করেন।
তারা বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রজ্বালিত এক দফা আন্দোলনে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। তার অনুপস্থিতির শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। তার স্মৃতি আমাদের কাছে অম্লান থাকবে। তার হত্যাকারীরা এখনো সাজা পায়নি। এটি আমাদের জন্য আরেকটি মর্ম বেদনার বিষয়। তার হত্যার বিচার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।’
চলতি বছরের গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস তরুণদের আত্মত্যাগেরই ইতিহাস। এটি নতুন স্বাধীনতার ইতিহাস। বাংলাদেশের মানুষকে নতুন করে স্বৈরাচারমুক্ত করার ইতিহাস। এই ইতিহাসের অগ্রবর্তী যোদ্ধা ও বীর আবু সাঈদের বৈষমবিরোধী চেতনা এবং গভীর দেশপ্রেম সমাজে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এবং জাতি কখনো তাকে ভুলবে না- এমনটিই আশা সবার।
"