বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
৩১৪ জাল জন্মসনদসহ ইউপি উদ্যোক্তা গ্রেপ্তার
বরগুনার বেতাগীতে মোকামিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) এক উদ্যোক্তার কম্পিউটারে বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩১৪টি জাল জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উদ্যোক্তা মো. আরিফুর রহমান মাতুব্বরকে (৩১) গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আহমেদ। আরিফুর রহমান মাতুব্বর উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের উত্তর করুনা গ্রামের বাসিন্দা।
বেতাগী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় পরিদর্শনে যান বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ফারুক আহমেদ। এ সময় ইউডিসির উদ্যোক্তার কাছে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান। পরে উদ্যোক্তা আরিফুর রহমানের কম্পিউটার তল্লাশি করে ফেনী, ময়মনসিংহ, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ৩১৪টি জাল জন্মনিবন্ধনের কাগজপত্র দেখতে পান। এর মধ্যে ১৯৯টি জন্মনিবন্ধন সম্পূর্ণ করা হয়েছে। ৯৯টি আবেদন অবস্থায় এবং ১৫টি রিজেক্ট করে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যানের আইডি ব্যবহার করে এসব জন্মনিবন্ধনের সনদ তৈরি করেন আরিফুর রহমান। এত অল্প সময়ে এতগুলো জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির বিষয়ে কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি আরিফুল। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আটক করে পুলিশ। তবে যাদের নামে জন্মনিবন্ধন হয়েছে, তারা বাঙালি না রোহিঙ্গা তা নিশ্চিত হতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে এসব জন্মনিবন্ধন বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী জালাল আহমেদ বলেন, ‘এত কম সময়ে এতগুলো জন্মনিবন্ধন তৈরির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তথ্যসেবা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ছেলেটি আমার ও সচিবের আইডি ব্যবহার করে এসব করেছে। এমন ঘটনা আর কখনো হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জালাল আহমেদ বলেন, এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সুভ্রত বলেন আমি মাত্র দুই মাস হয়েছে মোকামিয়া পরিষদে এসেছি আমি আসার আগেই আরিফুলের কাছে আমাদের পরিষদের জন্মনিবন্ধনের আইডি ছিল আর জন্মনিবন্ধনের আবেদনগুলো সব আরবফুল নিজেই করতেন। সচিব ছাড়া এই কাজ তো শুধু (ইউডিসি) বা উদ্যোক্তার একার পক্ষে করা সম্ভব না বিষয় জানতে চাইলে সচিব প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যদি ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধনের আইডি কারো কাছে থাকে আর তার যদি এই কাজ জানা থাকে তাহলে তিনিই জন্মনিবন্ধনের কাজ করতে পারবেন। আরিফুল চেয়ারম্যান ও আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে এই কাজ করেছেন।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী আফিসার (ইউএনও) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রে অস্বাভাবিকহারে জন্মনিবন্ধন তৈরির বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে সেখানের দায়িত্বরত ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এসব জন্মনিবন্ধন করা ব্যক্তিদের বর্তমান ঠিকানা বা জন্মস্থান বেতাগীতে নয়। একেক জনের জন্মস্থান একেক স্থানে। এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে।
এ বিষয়ট বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হক বলেন ভুয়া জন্মনিবন্ধন করার মোকামিয়ক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. হাসিব বাদী হয়ে একটি মামলা করলে আরিফুরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোটে চালান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না, সেটা তদন্ত হচ্ছে এবং আরিফুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে এখই বলা যাচ্ছে না যে এতে আরো কেউ জড়িত আছে কি না।
"