প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

গণ-অভ্যুত্থানগাথা

মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মানিক

ফরিদগঞ্জ চান্দ্রা সড়কের পাশে শহীদ মানিকের গ্রাম

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার সামনে বিজয় মিছিলে গিয়ে শহীদ হন বিক্রয়কর্মী আবদুল কাদির মানিক (৪৩)। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব মানিকরাজ গ্রামের বাইনের বাড়ির মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে। গুলিতে মানিকের মাথার একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন শহীদ মানিকের পরিবার।

ফরিদগঞ্জ চান্দ্রা সড়কের পাশে শহীদ মানিকের গ্রাম। আধা পাকা সড়ক দিয়ে যেতে হয় তার বাড়িতে। বাড়ির পাশের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। বাড়িতে থাকেন মানিকের মা, স্ত্রী ও সন্তানরা। শহীদ মানিক পেশায় একজন বিক্রয়কর্মী। বেশ কয়েক বছর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সর্বশেষ রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী শাহী স্টিল নামের প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মানিক তাদের গ্রাম মানিকরাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি ও স্থানীয় চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। অভাব-অনটনের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেনি।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকের বাবা নুর মোহাম্মদ ১২ বছর আগে মারা গেছেন। তিনি পেশায় ছিলেন কৃষক। মানিকের ৫ ভাই ও ৩ বোন। ভাইবোনদের মধ্যে মানিক তৃতীয়।

মানিকের মা ফাতেমা বেগম (৭০) বলেন, গুলিতে আমার ছেলের মাথার একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমার ভদ্র শান্তশিষ্ট ছেলে আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়ে মরল। ছেলে আমার ছুটি পেলে বাড়িতে আসত। সর্বশেষ গত ঈদুল আজহার ছুটিতে এসে ১২ দিন বাড়িতে ছিল। এরপর কর্মস্থলে চলে যায়। ৫ আগস্ট দুপুর ১২টায় আমার সঙ্গে কথা হয় ফোনে। আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিত। ওই দিন কী কারণে আমার ছেলে ফোনে বারবার বলেছে মা আমার ছেলেকে দেখে রাইখেন। এরপর আর কথা হয়নি ছেলের সঙ্গে। এখন এই অবুঝ সন্তানদের কী হবে বলে কাঁদতে থাকেন তিনি।

মানিকের মেয়ে জোহরা ও জান্নাতুল মাওয়া বলেন, বাবা আমাদের সঙ্গে প্রায় দিনই কথা বলতেন। পড়ার জন্য বলতেন। বলতেন আমরা যেন মায়ের কথা শুনি। এই দুই অবুঝ শিশুর সঙ্গে কথা বলে বেুাঝা গেল তারা এখনো বাবার শূন্যতা অনুভব করতে পারেনি। একমাত্র ছেলে মোস্তাকিম ওই সময় ঘুমিয়েছিল।

মানিকের স্ত্রী রাহিমা আক্তার (২৮) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী খুব ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন। ৫ আগস্ট মোবাইল ফোনে সকাল সাড়ে ৭টায় একবার এবং ১০টায় আরেকবার কথা হয় স্বামীর সঙ্গে।

১০টায় ফোন দিয়ে তিনি বলেন বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন, উঠিয়ে যেন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি। এরপর আর কথা হয়নি। বিকেল ৩টায় খবর পান তিনি উত্তরা পূর্ব থানার সামনে বিজয় মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন।

৬ আগস্ট ভোরে ওই এলাকার লোকজন তার লাশ গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। দুপুর ১২টায় বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর দাফনের পরে কর্মস্থল এলাকা থেকে লোকজন ফোন করে যাওয়ার জন্য। সেখানে গেলে জামায়াতের লোকজন ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়। আর স্থানীয় এস এম জাহাঙ্গীর নামে ব্যক্তি হত্যার ঘটনায় মামলা করার জন্য বলে। তার সহযোগিতায় থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এম এ হান্নান সাহেব ৫০ হাজার, দলীয় আরেক নেতা ১০ হাজার এবং সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ ২০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। এর বাইরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা ও কিছু ফল দিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, আমার সংসারের তিন সন্তানকে নিয়ে সামনে কী করে চলব এবং কীভাবে তাদের মানুষ করব তা চিন্তা করলে সামনে শুধু অন্ধকার দেখি। সরকারি সহযোগিতা না পেলে আমরা কই যাব। আমার সন্তানদের সামনে ঠিকমতো পড়াশোনা করাতে পারব কি না আল্লাহ পাক জানেন। আমার বাবার বাড়ির অবস্থাও ভালো নয়, যে তারা সাহায্য-সহযোগিতা করবে।

মানিকের ছোট ভাই আলম বলেন, এক মাস আগে থানা থেকে পুলিশ আসে। তাদের সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রও ছিল।

পুলিশ এসে আমাদের নানা বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে এবং আমার ভাবি এবং মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। তার কয়েকদিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে লোক এসেছিল খোঁজ নিতে। শহীদ মানিকের মা ফাতেমা বেগম, স্ত্রী রাহিমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের জন্য সরকারি সহায়তা এবং এই হত্যার তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close