নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ অক্টোবর, ২০২৪

৪ বিসিএস বাতিলের দাবি বিএনপির

সম্প্রতি পদত্যাগকারী পাবলিক সার্ভিস কমিশন সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগকৃত ২ হাজার ৬৪ কর্মকর্তার প্রজ্ঞাপন এবং ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি পদত্যাগকারী দলকানা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের দলীয় বিবেচনায় বিসিএস ৪৩তম ব্যাচের সুপারিশকৃত ২ হাজার ৬৪ জন প্রার্থীকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের মানুষকে চরমভাবে হতভম্ব ও হতাশ করেছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঢালাওভাবে সুপারিশকৃত শাসকদলীয় প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নিয়োগ দান করা হলে তা হবে চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীকে বঞ্চিত করে দলীয় ভিত্তিতে বিবেচিত ও সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএস বাতিল করার জন্য আমরা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি হাসিনা সরকারের সময় এরই মধ্যে আবেদনকৃত ৪৪তম বিসিএসের যে ৯০০০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল তার মধ্যে ৩০০০ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত উত্তরপত্রের মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪৬ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস আগে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রবেশে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী গোষ্ঠীর এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে এই তিনটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেকোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আপস করার বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ নেই। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে যেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৪৩তম বিসিএসের ঢালাও নিয়োগদানের মাধ্যমে সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সরকারি প্রশাসনের উচ্চতর পদগুলোয় পুনর্বাসন করার এই অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন্থি এবং কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

৪৩তম বিসিএস প্রার্থীদের চূড়ান্ত কীভাবে হতে পারে- তার ব্যাখ্যা দিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতীতে ২৭তম বিসিএস একটা নজির রয়েছে। ২০০৭ সালে ২৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা হয়েছিল। পরে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। আমরা ওই একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আবেদন জানাচ্ছি যাতে জাস্টিস এনশিউর হয় সেটা প্রেসক্রাইভ করেছি। একই সঙ্গে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছি। আমরা আবেদনকারীদের আবেদন করতে বলছি না।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি, আধা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিসহ প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নতুন চাকরি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আমরা মনে করি এসব পদে যারা এরই মধ্যে আবেদন করেছেন তাদের পাশাপাশি আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করার কারণে এ সুযোগ চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতাকে আরো উন্মুক্ত করবে এবং যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে সরকার যোগ্য ও মেধাবীদের সেবা পাবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আর সে জন্যই আওয়ামী দলীয় পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগকৃত, সুপারিশকৃত কিংবা সুপারিশের জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরছি, যাতে অন্তর্বর্তী সরকার সব ধরনের প্রশ্ন ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close