সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতে লাশ উত্তোলন
ঢাকার সাভারে ২০২১ সালে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কি না- তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল বুধবার সকালে লাশটি উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ লাশ উত্তোলন করার আদেশ দেন। সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর এক রিট পিটিশনের আদেশের আলোকে ফরেনসিক বিভাগ, সিআইডি, স্থানীয় সরকার সচিবের প্রতিনিধি, জেলা রেজিস্ট্রারের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহটি কবর থেকে তোলা হয়। হারিছ চৌধুরী বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম বলেন, লাশটি তোলার পর মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহটি হারিছ চৌধুরীর কি না- সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার দেওয়াসহ তাকে দাফনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ততক্ষণ মরদেহটি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে সাভারের বিরুলিয়ায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসার কবরস্থানের একটি অংশে খোঁড়া হচ্ছে। সেখানে পুলিশ ও জনপ্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, হারিছ চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ও মাদরাসার শিক্ষকরা উপস্থিত রয়েছেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লাশটি কবর থেকে তোলা হয়। পরে মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। পরে মরদেহটি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
লাশ উত্তোলনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, এক-এগারোর পর তার বাবা আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না আবার নিজের পরিচয় নিয়ে দেশে থাকার মতো পরিবেশও ছিল না, এ জন্য তিনি বাধ্য হয়ে পরিচয় পরিবর্তন করেন। মাহমুদুর রহমান নামে তার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল। তার পাসপোর্টে ওমরাহ করার জন্য ভিসা লাগানো ছিল, তবুও তিনি দেশ ছাড়েননি।
সামিরা তানজিন বলেন, ‘২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কখনোই তার পরিচয় গোপন করিনি। যখনই কেউ জিজ্ঞাসা করেছে, আমি বলেছি, সাভারে দাফন করা মাহমুদুর রহমান নামের ব্যক্তি আমার বাবা হারিছ চৌধুরী এবং তিনি বাংলাদেশেই মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর দাদাবাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ওই সময়ের স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বাধা দেওয়ায় বাধ্য হয়ে সাভারে কবর দেওয়া হয়।’
সামিরা তানজিন আরো বলেন, ‘সাভারের ওই মাদরাসার শূরা সদস্য আমার বড় মামা। মামা ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় মাহমুদুর রহমান নামে বাবাকে মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর আমি নিজে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আমার বাবার মৃত্যুর সনদ দেওয়া হয়নি আমাকে। বাবার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল থাকতে পারে না।’
হারিছ চৌধুরীর জানাজা পড়ান মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমী। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ওইদিন বাদ আসর তিনি জানাজায় ইমামতি করেন। তখন করোনার পরিবেশ ছিল। তারা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবে মরদেহ দাফন করেন। এখন পর্যন্ত তাকে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবেই জানেন।
বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ মোল্লা বলেন, এখানে অনেকেই কবরের জন্য জমি নেন। এটা অন্যের নামে বরাদ্দ ছিল। মাহমুদুর রহমানের আত্মীয়রা কবরের জন্য জায়গা লাগবে জানালে অন্য একজনের বরাদ্দ করা জমি তাদের দেওয়া হয়। এলাকাবাসী বা মাদরাসার কেউ জানতেন না, এটি হারিছ চৌধুরীর মরদেহ।
"