ছায়েদ আহমেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী)

  ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

নিঝুম দ্বীপে কমছে হরিণ

দিন দিন বন উজাড়, জনবসতি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব ও বনদস্যুর আক্রমণসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

চল্লিশের দশকে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠে প্রায় ২৩০ বর্গকিলোমিটারের একটি ভূ-ভাগ। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণে জেগে ওঠা এই ভূ-ভাগের স্থানীয়রা নাম দেওয়া হয় বাউল্লারচর বা চর ওছমান। ধীরে ধীরে সেখানে গড়ে উঠছে জনবসতি। যেখানে ৭৪ সালের দিকে দেশের বনবিভাগ বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে। কালক্রমে দ্বীপটির নাম হয় ‘নিঝুম দ্বীপ’। হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ও জাহাজমারা ইউনিয়নের সরকারি গেজেটভুক্ত ১১টি চরের সমন্বয়ে ৪০ হাজার ৩৯০ একর এলাকা নিয়ে ‘নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান’ গঠিত হয়, যা ২০০১ সালে সরকার কর্তৃক ঘোষিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বন নিয়ে ১১ নম্বর নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের ঘোষণা দেয়, যা ছিল জাহাজমারা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড মাত্র। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে একটি রিট আবেদনও করা হয়। দ্বীপটিতে হরিণের সংখ্যা নিয়ে জাহাজমারা রেঞ্জ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে বনবিভাগ নিঝুম দ্বীপ অংশের বনে কয়েক জোড়া চিত্রা হরিণ ছাড়ে। পরে যা কয়েক হাজারে পৌঁছায়। কিন্তু জাতীয় উদ্যান এলাকায় দিন দিন মানুষের বসতি বেড়ে যাওয়ায় বনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। এ ছাড়া নিঝুম দ্বীপে কুকুর-শিয়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক সময় কুকুর-শিয়ালের আক্রমণে হরিণ আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। উপযুক্ত খাদ্য বা পরিবেশ না থাকায় বিভিন্ন সময় জাতীয় উদ্যানের অন্যান্য চরে ছড়িয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করে ওই বনবিভাগ।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে হরিণ শুমারি অনুযায়ী এখানে হরিণের সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ হাজারের মতো। নিঝুম দ্বীপের অভ্যন্তরে খালগুলো দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা-ট্রলার চলাচল, সি-বিচ এলাকায় লাইটহাউস স্থাপন, ভূমি লোভীর দৌরাত্ম, নতুন নতুন বসতিদের দ্বারা বন উজাড় হওয়ার কারণে হরিণ কমছে বলে মত স্থানীয়দের।

এদিকে, হরিণের জন্য সুপেয় পানি ও নিরাপত্তার জন্য নির্মিত পুকুরগুলোর উঁচু পাড় এর আগে বিভিন্ন বন্যায় ভেঙে গেছে। এতে হরিণের সুপেয় পানি ও নিরাপত্তার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই পুকুরগুলোর সংস্কারের জোর দাবি করেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে দুলাল উদ্দিন নামের এক সমাজকর্মী বলেন, হরিণ এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। কয়েক বছর আগেও এখানকার বিভিন্ন বাগানে ঢুকলেই হরিণ দেখা যেত। এখন দিনের পর দিন অপেক্ষা করলেও হরিণের দেখা মেলে না। নিঝুম দ্বীপে জনবসতি বৃদ্ধিসহ নানা বৈরী পরিস্থিতিকে দায়ী করেন তিনি।

চান মিয়া নামের স্থানীয় এক মেম্বার জানান, নিঝুম দ্বীপ এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিমের চরে প্রচুর মহিষ বিচরণ করে। ফলে হরিণ একদিকে ঘাস পায় না, অন্যদিকে গাছের পাতাও তেমন পায় না। এসব কারণেও হরিণ কমে যেতে পারে বলে তিনি জানান।

জাহাজমারা বন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, নিঝুম দ্বীপ বনাঞ্চলে হরিণের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য শোনা গেলেও সরকারিভাবে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তবে স্থানীয়ভাবে তথ্য প্রকাশের নজির আছে। তিনি জানান, অতীতে হরিণ নিধন ও পাচারের ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে তা নেই। জাতীয় উদ্যান এলাকার বিভিন্ন চরে নতুন নতুন ম্যানগ্রোভ বনায়ন সৃজনের মাধ্যমে হরিণের খাদ্য ও উপযুক্ত বাসস্থানের পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছর থেকে ‘জাতীয় উদ্যান’ এলাকায় ‘স্মার্ট প্যাট্রলিং’ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close