নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

ফোরাম নেতাদের দাবি

শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলায় বিজিএমইএর পর্ষদ ব্যর্থ

তৈরি পোশাকশিল্পে চলমান শ্রম অসন্তোষ মোকাবিলায় বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফোরাম নেতারা। তাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারকে পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বোঝাতেও ব্যর্থ হয়েছে বিজিএমইএর পর্ষদ। একটি গোষ্ঠী পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করার কলকাঠি নাড়ছে। অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ কমাচ্ছে। অন্যদিকে, তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের ১৮ দফার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন ও শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন ২০টি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

এদিকে, পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনী জোট ফোরামের মতবিনিময় সভায় নেতারা এসব দাবি করেন। গত শনিবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সভায় ফোরামের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা অংশ নেন। ফোরামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুর রশিদ হোসাইনী বলেন, পোশাকশিল্পে অস্থিরতা আগেও হয়েছে। তবে অতীতের অস্থিরতা এত দীর্ঘায়িত হয়নি। এই অস্থিরতার পেছনে কারো ইন্ধন থাকতে পারে। তারা শ্রমিক অসন্তোষের নামে দেশের অর্থনীতিকে ধূলিসাৎ করতে চায়।

আবদুর রশিদ হোসাইনী আরো বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা করে অনেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অনেকে আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি; বিদেশেও টাকা পাচার করেছেন। তাদের কারণে বেকায়দায় থাকেন সত্যিকারের মালিকরা।

চলমান সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএর পর্ষদকে চারটি পরামর্শ দেন সাবেক সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ। প্রথমত, আশুলিয়া এলাকায় ২৫-৩০টি কারখানা এখনো বন্ধ আছে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এই কারখানাগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আশুলিয়ার কারখানাগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রেসকিউ প্যাকেজ বা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি ঘোষণা করা দরকার। তৃতীয়ত, তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। চতুর্থত, বিজিএমইএ সদস্যদের কারখানার সক্ষমতার ভিত্তিতে পৃথক নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

ফয়সাল সামাদ আরো বলেন, এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে যেভাবে তৈরি পোশাকের ব্যবসা বাংলাদেশে এসেছিল, সেভাবেই অন্য দেশে চলে যেতে পারে।

রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, বর্তমানে আশুলিয়ায় যা হচ্ছে, তা শ্রম আইনবিষয়ক সমস্যা নয়। আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সমস্যা। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হলেও তার ব্যবহার হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। আইন ভঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা গেলে এত দিনে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু তৈরি পোশাকই একমাত্র খাত, যেখানে অদক্ষ শ্রমিকরা মাসে বেতন, ওভারটাইমসহ ১৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। দেশে কি আর কোনো খাত আছে, যেখানে অদক্ষ শ্রমিকরা ১৫ হাজার টাকা বেতন পান?

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থায় আনা ভীষণ জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা ক্রেতা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। তার মতো বিশ্ববরেণ্য মানুষকে ব্যবহার করতে না পারলে সেটা হবে আমাদের (বিজিএমইএ) ব্যর্থতা।’

১৮ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন ও শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি : তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের দাবিদাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ দফার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন ও শ্রমিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন ২০টি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তারা শ্রমিকদের ওপর দমন নীতির পথ পরিহার করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান।

রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রবিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান ২০টি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তারা বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে ও অপপ্রচারের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির যেকোনো চক্রান্ত রুখে দিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে উৎপাদন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যেকোনো বাধা ও ষড়যন্ত্রের বিষয়ে শ্রমিকদের সতর্ক থাকতে বলেন শ্রমিকনেতারা। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ পোশাকশিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘদিন অবাধ ট্রেড ইউনিয়নসহ আইনানুগ সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় দাবিনামা উত্থাপন ও আন্দোলন করতে বাধ্য হন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় ১৮ দফা চুক্তি সই হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close