আমিনুল ইসলাম রানা, রাজবাড়ী
‘পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব, যাওনের জায়গা নাই’
‘আমার পরিবার এ পর্যন্ত ছয়বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। পদ্মার ভাঙনে আমরা নিঃস্ব, এখন কোথায় যাব, যাওনের জায়গা নেই। ভাঙন আতঙ্কে রাত কাটে আমাদের। চোখের সামনে এগুলো সহ্য হয় না।’ কথাগুলো বলেছেন গোয়ালন্দ উপজেলার নদী তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার ছনেকা বেগম (৬০)। শুধু ছনেক বেগম নন, পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার হাজারো পরিবার ভিটেবাড়ি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যের জায়গায় ঠাঁই নিয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নদী তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকার কাওয়াল জানিপাড়ায় পদ্মানদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক দিনেই ৬০ ফুট কৃষিজমি পদ্মার বুকে হারিয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে কয়েকশ পরিবারের সদস্যদের।
জানা যায়, গোয়ালন্দে গত এক দশকে নদীভাঙনে সর্বশান্ত হয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছেন হাজারও পরিবার। পরিবারগুলো উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্যের সামান্য জমি বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে কোনোমতে মাথাগুঁজে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে পদ্মায় হারিয়ে যাচ্ছে গোয়ালন্দের মানচিত্র। শুধু গত বছরের ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কে শত শত পরিবার নদীর পারে এসে ভিড় জমিয়েছে। এখানে যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশ কয়েক ভাঙা দিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেকে ছিল বড় গৃহস্থ মাঠে শত বিঘা (৩৩ শতক ১ বিঘা) জমি গোয়ালে গরু আর গোলা ভরা ধান আজ সেগুলো শুধুই স্মৃতি। চার-পাঁচবারের ভাঙনে এখন অন্যের জমি চাষ করে চলে পাড়ের মানুষ জীবিকা। এখন আগের সেই দিন শুধুই স্মৃতি।
আজিজ সরদার বলেন, কয়েকজন মানুষ নিয়ে তার ঘরবাড়ি ভাঙছে। তিনি বলেন, আর মাত্র দুই কাঠা সামনে পানি আসলেই আমার ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সারা রাত দুচোখ এক করতে পারিনি। প্রায় সবাই জেগেছিল এই বুঝি নদীতে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায়। চার দিন ধরে ভাঙছে। গত রাতেই (শনিবার) সবচেয়ে বেশি ভাঙছে।
ভাঙতে ভাঙতে এখন আর যাওয়ার জায়গা নেই। এক আত্মীয়ের জায়গায় আছে, কলেজের কাছে সেখানে যাচ্ছি।
এক রাতেই খালেক ব্যাপারীর ১০ কাঠা অর্থাৎ ৪০ হাত ফসলি জমি পদ্মার বুকে হারিয়ে গেছে। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হয়তো আজ (গতকাল) রাতেই তার আরো কিছু জমি হারিয়ে যাবে পদ্মার। তখনো থেকে থেকে ভাঙছে তার জমি। তিনি বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মিনতি তারা যেন ব্যবস্থা নেন। তা না হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এরই মধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) সকালে সেটা জমা দেব। দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙন চলছে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ না করলে মানচিত্র থেকে এই এলাকা হারিয়ে যাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমি এই এলাকা পরিদর্শন যাব। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"