আবদুল্লাহ, শেকৃবি
বাস্তবে শ্রমিক নেই মজুরি উঠানো হচ্ছে দিনে ৬০০ টাকা
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
দাপ্তরিক নথিতে অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্বহীন শ্রমিকের খোঁজ মিলেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি)। বছরের পর বছর ধরে ময়লা পরিষ্কার করে যাচ্ছে নথিভুক্ত এই শ্রমিকরা, কিন্তু বাস্তবতা হলো কাজির গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই। পারিশ্রমিক হিসেবে টাকাও নিচ্ছেন নিয়মিত তারা। এভাবেই দীর্ঘতিন ধরে লুপাট হচ্ছে সরকারি অর্থ। একজন শ্রমিক বাস্তবে নেই, কিন্তু তার নামে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি তোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার অধীনে কাজ করা অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে মো. ফয়সাল নামের এমন একজন অস্তিত্বহীন শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। ফয়সাল ২০২১ সাল থেকে দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে আসলেও বাস্তবে এই নামে কেউ নেই। কিন্তু তার নামে নিয়মিত উঠানো হচ্ছে মজুরির টাকা।
এক অফিস নথিতে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৫ জুন থেকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক সংগৃহীত বর্জ্য আগারগাঁও এ স্থাপিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া এবং সিটি করপোরেশনের গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য দুজন মৌসুমি শ্রমিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী শ্রমিকপ্রতি ৬০০ টাকা হারে বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুন অনুমোদিত আরেক অফিস আদেশে দেখা যায়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ কাজে ব্যবহৃত ময়লার গাড়িতে কাজ করার জন্য মো. সালাউদ্দিন, পিতা: জেবল হক এবং মো. ইমন, পিতা: মৃত রিপন নামের দুজন মৌসুমি শ্রমিক গত ০১/১১/২০২০ তারিখ থেকে ৩০/০৬/২০২১ তারিখ পর্যন্ত মোট আট মাসের মজুরি পরিশোধ করার বিষয় ঘটনাত্তোর অনুমোদন এবং ভবিষ্যতেও একই পদ্ধতিতে কাজ করার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। ফলে অস্থায়ীভাবে ক্যাম্পাসের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য নিয়মিত ৪ জন শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এস্টেট শাখার দৈনিক শ্রমিক হাজিরা বিলের নথি থেকে জানা যায় শ্রমিকরা হলেন- মো. সালাউদ্দিন (পিতা: মৃত জেবল হক, আগারগাঁও), মো. ইমন (পিতা: মৃত রিপন, বটতলা, শেকৃবি), মো. শাহিন (পিতা: মো. সালাউদ্দিন, আগারগাঁও, ঢাকা), ও মো. ফয়সাল (পিতা: মৃত আবদুল মান্নান, আগারগাঁও, ঢাকা)। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শ্রমিকদের মধ্যে শাহিন হলো আরেক শ্রমিক সালাউদ্দিনের ছোট ছেলে। সালাউদ্দিন বয়স্ক হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে কাজে অনিয়মিত। আর ফয়সাল নামে কোনো শ্রমিকে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। নিয়মিত কাজ করা শ্রমিকরাও ফয়সাল নামের কাউকে চেনেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির এস্টেট শাখার সিনিয়র কেয়ারটেকার মো. বেলাল হোসেন বলেন, ওই ৪ জন শ্রমিকের মধ্যে ইমন আর শাহিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কাজ করে আর ময়লা বাইরে সেকেন্ড গেটের পাশে অবস্থিত র্যাব-২-এর বর্জ্য সংগ্রহ পয়েন্টে নিয়ে যায়। আর সালাউদ্দিন (অসুস্থ হওয়ায় তার জায়গায় বড় ছেলে মাইনুদ্দিন) এবং ইউসুফ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লাগুলো উঠায় দেয়। কিন্তু দৈনিক শ্রমিক হাজিরা বিলে মো. ফয়সাল কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ও আগে কাজ করত কিন্তু ৫ আগস্টের পর সে পালিয়ে যাওয়ায় আর কাজ করে না। ফয়সালকে পাকা মার্কেটের যুবলীগ নেতার কাজে ঢুকিয়েছিল বলে জানান তিনি। তবে ফয়সাল নামের কাউকে চেনে না দাবি করে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শওকত বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কীভাবে কাউকে দেব? আমি তো এ নামের কাউকে চিনিই না।
এস্টেট শাখার দৈনিক শ্রমিক হাজিরা বিলে স্বাক্ষর করা বিভাগটির সহকারী রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ গৌতম চন্দ্র রায় বলেন, আমি তো এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। সাইন দিতে হয় তাই দিই, এসব হুমায়ুন (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) ভাই আর বেলাল (সিনিয়র কেয়ারটেকার) দেখে।
এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন, ৪ জনের মধ্যে ৩ জন নিয়মিত কাজ করে ১ জন বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে, দিনমজুরের কাজ তো। আমরা প্রায় ২ বছর থেকে বেতনটা দেই আগে দিতাম না। ফয়সাল আগে কাজ করত চলে যাওয়ার পর ওর জায়গায় ইউসুফ কাজ করে। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফ বলেন, আমি তো বিষয়টা জানি না, তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।
"