জাবি প্রতিনিধি
শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে জাবিতে সড়ক অবরোধ
ঢাকার আশুলিয়ায় গুলিতে এক শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন তারা, যা দুপুর ২টায় শেষ হয়। এ সময় সড়কের উভয় লেনে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল।
গত সোমবার আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে কাউসার নামের এক শ্রমিক নিহত এবং অন্তত পাঁচজন আহত হন। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড বহন ও বহিরাগতদের গাড়ি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবরোধ চলাকালে নানা স্লোগান দেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। অবরোধে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেটা খুবই অপ্রত্যাশিত; কারণ স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে হটানো হয়েছে বেশি দিন হয়নি। কিছুদিন সময়ের ব্যবধানে রাষ্ট্র যদি একই রকমভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় জনগণকে দমানোর চেষ্টা করে, জনগণের অধিকার বঞ্চিত করার চেষ্টা করে, তাহলে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের যতখানি, ঠিক ততখানি অংশগ্রহণ শ্রমিকদের ছিল উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, ‘আমরা যে অভ্যুত্থানটি ঘটিয়েছি, সেটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। কখনো কখনো শ্রমিকরা অগ্রভাগে ছিলেন এবং জীবন দিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট লংমার্চে অসংখ্য পোশাক শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল। কাজেই সেই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন সরকারের হাতে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা খুন হচ্ছেন, সেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষোভের।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ বলেন, ‘আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সেই বিশ্ববিদ্যালয় শ্রমিকের টাকায় চলে, আমার শিক্ষকের বেতন হয় শ্রমিকের টাকায়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ক্রয় করা হয় শ্রমিকের টাকায়। যার কারণে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি শ্রমিকের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা শ্রমিকের পাশে দাঁড়িয়েছি। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। এই দায় অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা সরকারকে নিতে হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইডি কার্ড বহনের নির্দেশ দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে স্ব-স্ব আইডি কার্ড বহন করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
একই দিন অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্যান্য গাড়ি (বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল) পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো।
"