গাজীপুর প্রতিনিধি

  ০২ অক্টোবর, ২০২৪

শ্রমিক বিক্ষোভে যানজট, সীমাহীন ভোগান্তি

বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এতে সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল। ফলে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন টি অ্যান্ড জেড গ্রুপের এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা। তারা মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন।

পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, এপিএল কারখানাটির অবস্থান গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায়। গত মাসের শুরুতে এই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষ বেতন দিতে অপারগতা জানিয়ে সোমবার বেতন পরিশোধ করার কথা জানায়। এরপর শ্রমিকরা আর আন্দোলন করেননি। তবে সোমবার বিকেলে বেতন দেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে রাতেই শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন। রাত ৯টার দিকে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবার ভোগড়া মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

কারখানার শ্রমিক আমিনুল হক বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে কারখানা বন্ধ। কিন্তু বন্ধ হওয়ার আগে আমরা যে কাজ করেছি, সেই বেতন এখনো পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। ৩০ সেপ্টেম্বর বেতন দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে নেমেছি।’

শ্রমিকদের বিক্ষোভে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের দিকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন এ দুই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ।

ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা বেতন পায় কারখানায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করুক। সড়কে কেন? ওদের এই অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’

ঢাকার বনানী এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন গাজীপুরের বাসিন্দা কবির হোসেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি নিয়মিত গাজীপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করি। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। পরে বাধ্য হয়ে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে উত্তরার আবদুল্লাহপুর গিয়ে বাসে উঠে অফিসে যাই।’

এদিকে নগরের কোনাবাড়ি এলাকার এম এম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা টিফিন বিল, নাইট বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে আজ সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল সোমবারও বিক্ষোভ করেছিলেন তারা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মালিকের গতকাল (গত সোমবার) শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, জেলার ৯টি কারখানা বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৪টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১টি কারখানা লে-অফ, ১টি অস্থায়ী বন্ধ এবং ৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প পুলিশ জানায়, বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ ছাড়া গাজীপুরের ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক আছে। পোশাক কারখানাগুলোয় কর্মীরা সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এসব কারখানায় প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close