নিজস্ব প্রতিবেদক
‘কন্যাশিশুর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’
কন্যাশিশুর জন্য বৈষম্যহীন ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে হলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা।
গতকাল সোমবার রাজধানীর দোয়েল চত্বরের বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা আরো বলেন, কন্যাশিশুর জন্য বৈষম্যহীন নিরাপদ ও ধর্ষণ ও ইভটিজিংমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সবার আগে প্রয়োজন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। যতক্ষণ পর্যন্ত এসব পরিবর্তন না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া সম্ভবপর নয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, সেফ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর রিফাত বিন সাত্তার, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুদের জন্য একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু, যাদের অর্ধেকই কন্যাশিশু। তাই আমাদের ভবিষ্যতের নাগরিক এই কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, কন্যাশিশুর বিকাশের সব সুযোগ নিশ্চিত করতে এবং তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। আমরা যে সমাজে বাস করছি সেখানে শিশুদের জন্য নিরাপদ জায়গা তৈরি করতে হবে। কন্যাশিশুদের চোখে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার দেখতে হবে স্বপ্ন। সারা দেশে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হলে বাল্যবিয়ে বন্ধ, শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া হ্রাস ও মানসিক দক্ষতা বাড়াতে পারলেই শিশুরা দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
শিশুদের অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতে একটি স্বাভাবিক ও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলায় র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তানিয়া খান বলেন, বাল্যবিবাহ এবং মেয়েদের জন্য অনিরাপদ পারিপার্শ্বিকতা কারণে কন্যাশিশুরা ঝরে পড়ছে। সব ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য নিরাপদ জায়গাটা সৃষ্টি করা জরুরি। যেখানে আমরা অবাধে বিচরণ করতে পারব। সন্ধ্যার পরে একজন ছেলে যেমন বাইরে একাকী ঘুরতে পারে, তেমনি একজন কন্যাশিশু বাইরে ঘুরতে পারে না। আমাদের সেই নিরাপদ পরিবেশটি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নারীর জন্য সেই পরিবেশটি আমরা চাই, সুযোগ আর সুবিধাও চাই। যারা সেই সুযোগ নেওয়ার জায়গাতে অবস্থান করছেন, তারা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করবে। যারা সে অবস্থানে নেই, তাদের সাহস রাখতে হবে। নিজেদের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সাহস রাখতে হবে। কন্যাশিশু ও নারী নিজের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাহসী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজনে উন্মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। ‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলের সামনে থেকে একটি র্যালি শুরু হয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। এ শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস হিসেবে।
"