জসিম উদ্দিন নাগর, ডিমলা (নীলফামারী)
বাড়ছে তিস্তার পানি, বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই
উজানের ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এখন বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। আমন ধানের চারা ও সবজির খেত প্লাবিত হয়েছে। নীলফামারী ডালিয়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ডালিয়া-২৯১.৫ স্টেশনে তিস্তার পানি শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং দুপুর ১২টায় ও বিকাল ৩টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়, তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে নীলফামারী ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী, টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের খগা খড়িবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী, পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। এসব এলাকার মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যাচ্ছে। পানি বাড়তে থাকায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশ পুকুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দবির উদ্দিন বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ঝুনাগাছ চাপানীর ছাতুনামা গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ১০ বিঘা জিমর রোপা আমনের লাগানোর জন্য বীজ বপন করেছিলেন, সে বীজতলা এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূবখড়িবাড়ী গ্রামের হুকম আলী বলেন, তার এক মণ রোপা ধানের বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে। খগা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের আ. মান্নান জানান, তার রোপা আমন ধানের বীজ ও মরিচ ও সবজির খেতে পানি ঢুকেছে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের জালাল জানান, তার ৫ বিঘা জমির রোপা আমন ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে আছে। তবে টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের মইনুল হক চোয়ারম্যান বলেন, এখনো তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদৌল্লা বলেন, তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এখনো কোনো বাঁধ ভাঙে নেই। রাতে পানি আরো বাড়তে পারে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা তিস্তাপাড়ের মানুষকে সতর্ক ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যাকবলিত পরিবারগুলো নিরাপদে থাকার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
এদিকে, শনিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়লেও এখনো বিপৎসীমার নীচ দিয়ে বইছে। এই পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে, পরবর্তী দুদিন হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। রংপুর বিভাগের আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, টাঙ্গন, পূণর্ভবা, ইছামতি-যমুনেশ্বরী নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভটিতে যমুনার পানি বাড়ছে। রাজশাহী বিভাগে গঙ্গা নদীর পানি কমছে, ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। বিভাগের করতোয়া, আত্রাই, বাঙ্গালী ও ছোট যমুনার পানি বাড়ছে, অপরদিকে মহানন্দার পানি স্থিতিশীল আছে। সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, আরো তিন দিন পর্যন্ত এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে, মনু, খোয়াই, ধলাই, ভুগাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে, সারিগোয়াইন ও কংস নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। চট্টগ্রামের মুহুরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী ও গোমতী নদীর পানি কমছে, সাঙ্গু নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। উজানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে মুহুরী, গোমতী ও ফেনী নদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
"