শুভ দে, মাভাবিপ্রবি
ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে গবেষণার কাজে জাপান গমন
- ড. আশেকুলের
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আশেকুল ইসলাম ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণের নতুন গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছেন। জাপানের এহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফরমেশন টেকনোলজির মিডিয়া হলে ড. আশেকুল ইসলাম প্রচলিত মশা নিধক কয়েল, রাসায়নিক স্প্রের পরিবর্তে ভেষজ তেল ব্যবহার এবং মশা নিয়ন্ত্রণে প্রজননগত বাধা সৃষ্টি করণ-সংক্রান্ত দুইটি নতুন গবেষণা উপস্থাপন করবেন।
প্রচলিত মশা নিধক যেমন- কয়েল, রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করলে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালাপোড়া, অ্যালার্জি, হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি প্রচলিত মশানিধক দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ক্যানসারের ঝুঁকিও থাকে। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় অনেক দিন ধরে এর বিকল্প খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। ড. আশেকুল ইসলামের নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাজারে প্রচলিত মশা নিয়ন্ত্রক ক্রিমের (মস্কিউটো রেপিলেন্ট) এর বিপরীতে ভেষজ তেল বা হারবাল তেল প্রায় দ্বিগুণ কার্যকরী। ভেষজ তেল লবঙ্গ, মৌরি ও দারুচিনি দিয়ে তৈরি। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ইউজেনল থাকার কারণেই এগুলোর প্রতিরোধক ক্ষমতা অনেক বেশি এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। অপর একটি গবেষণায় কীটপতঙ্গ জীববিদ্যা বিশেষজ্ঞ ড. আশেকুল ইসলাম খুব সাড়া জাগানিয়া ফলাফলে উপনীত হয়েছেন। বর্তমান বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রকোপের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গু ভাইরাসকে সেকেন্ডারি পরিবাহী এডিস অ্যালবোপিক্টাসের উত্থান। কিন্তু বাজারে প্রচলিত সব ধরনের প্রতিষেধক এডিস এজিপ্টিকেই কেন্দ্র করে আবিষ্কৃত হয়েছে। ড. আশেকুলের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যালবোপিক্টাস এবং ইজিপ্টি একই সাথে বেড়ে উঠলে ইজিপ্টি অ্যালবোপিক্টাসের প্রজননকে বাধা দিতে পারে। অ্যালবোপিক্টাসের উত্থান হলে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রক্রিয়া নতুন রূপে পৃথিবীতে হানা দিতে পারে। বাজারে প্রচলিত প্রতিষেধকগুলো ইজিপ্টিকেই কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে। তাই অ্যালবোপিক্টাসের এরূপ নিয়ন্ত্রণ মহামারিকে ঠেকাতে সক্ষম হবে। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. আশেকুল ইসলাম বলেন, জাপানে এহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফরমেশন টেকনোলজির মিডিয়া হলে গবেষণা কলাবরেটর অব জেএসপিএস কোর টু কোর প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় আমি আনন্দিত। বৃহত্তর গবেষণার সুযোগ পেলে প্রজননে বাধা সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি মশা নিয়ন্ত্রণ গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ থেকে দুজন গবেষক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম জেএসপিএস কোর টু কোর অন ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোসেস টু কেমিক্যাল রিস্ক ম্যানেজমেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। তারা হলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. আশেকুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক ড. শঙ্কর চন্দ্র। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ড. আশেকুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি জাপানের মনবুশো বৃত্তি নিয়ে কানাজায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের বায়োলজি সেন্টার থেকে পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এবং মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা করে যাচ্ছেন। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার প্যাডাং স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন বিদেশি ফ্যাকাল্টি প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
"