রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

টঙ্গীতে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা

বেআইনিভাবে ঘর নির্মাণ করে সালামি নেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা * ঘরের ভাড়া ধরা হয়েছে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা * মিলগেট এলাকার প্লটগুলো উদ্ধারে দ্রুত অভিযান হবে

বিএনপির হাইকমান্ড থেকে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নেতাকর্মীদের বিরত থাকার জন্য বারবার নিষেধ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতারা। এরই মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় অনেকই দল থেকে করা হয়েছে বহিষ্কার। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখি গাজীপুরের টঙ্গীতে সরকারি জমি দখল করে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী চালিয়ে যাচ্ছেন দখল বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপির প্রবীণ নেতাকর্মীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টঙ্গীর ৫৫নং ওয়ার্ড মিলগেট এলাকায় রাজউকের জমিতে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া ও পজিশন বিক্রির করছেন ৫৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মো. সেলিম হোসেন, ৫৫নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি হাজী জহিরুল ইসলাম ওরফে নাতি জহির, সাধারণ সম্পাদক হাজী আবু শাকের, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল খান, সাবেক সহসভাপতি মো. আল আমিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন। অভিযোগ আছে এই ছয় সমন্বয়কারী নেতৃত্বেই ৫৫নং ওয়ার্ডে পরিচালিত হচ্ছে সব অপকর্ম।

জানা গেছে, টঙ্গীর ৫৫নং ওয়ার্ড মিল গেট এলাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বেশকিছু প্লট রয়েছে। রাজউকের এসব প্লটের অধিকাংশই দখল করে আছে বস্তির নিম্নআয়ের মানুষে। সরকার পরিবর্তনের পর গেল কিছুদিন ধরে ৫৫নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতারা বিভিন্ন জায়গায় রাজউকের প্লট দখল করে দোকান নির্মাণ, বিভিন্ন পোশাক কারখানার বর্জিত মালামাল, ট্রাক স্ট্যান্ড, ফুটপাত, পিকাপ স্ট্যান্ডসহ সবকিছুই নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে অভিযুক্ত বিএনপির নেতারা। 

সরেজমিনে টঙ্গীর মিলগেট এলাকার অলিম্পিয়া মসজিদের উত্তর পাশে সরকারি জমিতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি টিনশেড দোকানঘর। এসব দোকান ঘরের জন্য ৫০ হাজার টাকা জামানত ও ৫ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করেছে বিএনপির নেতারা। এ ছাড়া এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিনিময় এসব দোকানের পজিশন বিক্রি হবে বলেও সরেজমিনে জানা গেছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিলগেট এলাকার সোনালী টোব্যাকো রোডে সরকারি জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ ও ৫৫নং ওয়ার্ড মাছিমপুর এলাকার বাংলাদেশ যাত্রা শিল্পী উন্নয়ন পরিষদ ভবনের পেছনে অংশের সরকারি জমিতে অবৈধ দোকান নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিলগেট অলিম্পিয়া মসজিদ সংলগ্ন মার্কেটগুলোর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বিএনপি নেতারা সরকার পরিবর্তনের পর অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন জায়গায় দখলদারত্ব চালাচ্ছেন তারা। 

এদিকে বিএনপির প্রবীণ নেতারা জানান, তাদের এমন কার্যক্রমে একদিকে যেমন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলের সুনাম অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে ভোট। এখনই যদি তাদের বেপরোয়া এই মনোভাবের লাগাম না টানা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এর কঠিন পরিণাম গুনতে হবে বিএনপিকে। এসব অভিযোগের বিষয় জানাতে মুঠোফোনে কথা হয় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর সেলিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অলিম্পিয়া মসজিদ মার্কেট সংস্কারের জন্য অস্থায়ীভাবে সরকারি ওই জায়গায় দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেট সংস্কার হয়ে গেলে দোকানদাররা আবারও মার্কেটে ফিরে যাবে। অ্যাডভান্স ৫০ হাজার টাকা জামানত ও ভাড়া ৫ হাজার টাকা নির্ধারণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। 

সরকারি জমিতে ৫০ হাজার টাকা জামানত ও ৫ হাজার টাকা ভাড়ার বিষয় আরেক অভিযুক্ত ৫৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবু শাকের বলেন, ৫০ হাজার টাকা জামানত ও ৫ হাজার টাকা ভাড়ার নির্ধারণের বিষয়টি সত্য কিন্তু এই টাকাটি মসজিদ সামনে যাবে। এর বেশি আমি কিছু জানি না আপনি কাউন্সিলর হাসান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। 

জামানত-ভাড়া নির্ধারণ ও পজিশন বিক্রির বিষয় জানতে ৫৫নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি হাজী জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মার্কেটের দোকানদাররা এখন একটি ভাড়া দিচ্ছে তাদের তারা যখন মার্কেটে দোকান ছেড়ে এখানে এসে আবার ব্যবসা শুরু করবে তখন এখানেও তাদের ভাড়া দিতে হবে। জামানত চাওয়ার ও পজিশন বিক্রির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। বাকি অভিযুক্তরাও একই মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে সদ্য অপসারিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসেমের মুঠোফোনের একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহ্বায়ক প্রভাষক বশির উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, অভিযোগগুলো আমি খতিয়ে দেখব। বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ এ বিষয় বলেন, টঙ্গীর মিলগেইট এলাকা আমাদের অনেক প্লট আছে। বেশির ভাগ প্লট বেদখল হয়ে আছে আমরা এগুলো উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। খুব দ্রুতই অভিযানে নামব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close