গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

স্মৃতি

হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে সিরাজগঞ্জের মাটির ঘর। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই মাটির ঘর আরামদায়ক বাসস্থান। অতীতে এ এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাটির ঘরে বসবাস করত। অবস্থা সম্পন্ন মানুষ মাটির দোতালা ঘর বানাতেন। সিরাজগঞ্জ জেলার চলনবিল এলাকার তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার পশ্চিম এলাকার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখনো কিছু কিছু মাটির তৈরি ঘর দেখা যায়। যার জানালা-দরজা কাঠের হলেও টালি অথবা খড়ের চালের বসতঘর। একসময় এ এলাকার ধনী-গরিব সবাই সেই ঘরে বসবাস করতেন। তবে কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্ত হতে বসেছে মাটি দিয়ে তৈরি ঘর।

স্থানীয়রা বলেছেন, তাড়াশের আট ইউনিয়নে ২৪৮টি গ্রামের মধ্যে দেশীগ্রাম ইউনিয়নের আড়াঙ্গাইল গ্রামে পাশাপাশি দুটি পরিবারে শত বছরের পুরাতন তিনটি মাটির দেওয়ালের খড়ের চালের বসতঘর এখনো রয়েছে। এ মাটির ঘরে শহিদুল ইসলাম (৭০) ও আকবর আলী (৮২) তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

শহিদুল ইসলাম ও আকবর আলী জানান, আরামদায়ক মাটির ঘরে দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও একসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। বৃষ্টি বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ না হলে এসব ঘর অনেক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে বলেও জানান তারা। তারা বলেন, বর্তমানে মানুষের আধুনিক জীবনযাপনের ইচ্ছা ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই মাটির ঘর ভেঙে টিন আর ইটের পাকা সেমিপাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। এ কারণে বিলুপ্ত হতে চলেছে অতীতের মাটির ঘর।

রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদেও মৌহার গ্রামের হালিম সেখ বলেন, ‘গ্রায় ৬০ বছর আগে এ ঘর নির্মাণ করেছিলাম। তখনকার সময়ে আমার খরচ হয়েছিল ৬ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমাদের এ এলাকায় মাটির ঘর অনেক রয়েছে। এখন এ ধরনের ঘর তৈরি করতে ৫০-৬০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়।

একই এলাকার হামিদ তালুকদার জানান, রায়গঞ্জ ও তাড়াশে অনেক মাটির ঘর রয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা বাপ-দাদার তৈরি করা মাটিরঘর প্রতি বছর কিছুটা মাটি দিয়ে সংস্কার করে বসবাস করছেন।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ নাহিদ হাসান খান জানান, রায়গঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় এখনো মাটির ঘর রয়েছে। অনেকেই সেগুলো সংস্কার করে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ঘরে বাস করছেন। তিনি বলেন, মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জীবনমানেরও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর তাই স্মৃতির পাতা হতে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালিদের চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী এ মাটির ঘর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close