দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
দুর্গাপুরে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক
মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি
রাজশাহীর দুর্গাপুরে এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক বসিয়ে গ্রামবাসীর কাছে একটি পুকুরের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কুহাড় উত্তরপাড়া গ্রামে কথিত সালিশে অর্ধশতাধিক মানুষের তালিকা করে ওই ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে চলে গেলে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান আয়নালের সভাপতিত্বে গত ৩ সেপ্টেম্বর ঝালুকা ইউনিয়নের কুহাড় উত্তরপাড়া গ্রামে একটি সালিশ বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মান্নান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাতেম আলী মাস্টার, বিএনপি নেতা জিল্লাল, নূর হোসেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হকসহ শতাধিক লোক। ওই বৈঠকে একটি মসজিদ পুকুরের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এলাকার লোকজনের তালিকা করা হয়। ওই সময় ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও সই নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায় , কুহাড় উত্তর পাড়া মসজিদের নামে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে তফসিল বর্ণিত ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ১ একর পকুর মসজিদের নামে লিজ সূত্রে কমিটি মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তুত করে। ওই পুকুরে আনোয়ারা বেগমের ৪২ শতক জমি থাকায় দখল নিয়ে মসজিদ কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই পুকুরকে কেন্দ্র করে কুহাড় উত্তরপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী পারিবারিক অবস্থা ভেদে ১৮ লাখ টাকা আয়নালের সহযোগী আলিমুদ্দিন ও ডাবলুর কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এছাড়া ওই পুকুরের মাছ এবং মসজিদ ফান্ডে রাখা ১ লাখ টাকাও কমিটির কাছ থেকে নিয়ে যায় আয়নালের লোকজন। বর্তমানে মসজিদ কমিটিকে মামলার ভয় দেখিয়ে আয়নালের লোকজন পুকুরটি আলিমুদ্দিন নামের একজনকে দিয়ে দিয়েছে।
কুহাড় উত্তরপাড়া ওয়াক্তিয়া মসজিদ কমিটির সভাপতি ছবের আলী অভিযোগ করেন, আয়নাল ও তার বাহিনীর ৩০-৪০ জন লোক মসজিদের পুকুর লিজের ১ লাখ টাকা জোর করে নিয়ে নিয়েছে। এমনকি সম্প্রতি সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে তার ওপর চাপানো ক্ষতিপূরণের ভাগ দিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে এবং নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে। পুকুর কেন্দ্র করে দাবি করা ওই টাকা দিতে না পারায় অনেকে এলাকা ত্যাগ করেছেন; অনেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাতেম আলী মাস্টার এ বিষয়ে বলেন, কুহাড় উত্তপাড়া মসজিদের পুকুর সংক্রান্ত বিষয়ে সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে ১৮ লাখ টাকা পুকুরের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সাবেক ইউপি কামরুজ্জামান আয়নাল নির্দেশ দিয়েছেন।
ঝালুকা ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান আয়নালের নেতৃত্বে এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে আলিমুদ্দিনের ক্ষতিপূরণ বাবদ এলাকার লোকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথিত লিজদাতা আলিমুদ্দিন বলেন, এলাকার লোকজন আমার পুকুরের ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ক্ষতি করেছে। সালিশ বৈঠকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৮ লাখ টাকা আমাকে দেওয়ার জন্য তালিকা করেছে আয়নাল চেয়ারম্যানের লোকজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালিশি বৈঠকের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নাল বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক বিশ্বনাথ সরকার বলেন, চাঁদাদাবির বিষয়টি আমার জানা নাই। দলের পরিচয়ে কারো বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, কুহাড় গ্রামে পুকুর সংক্রান্ত বিষয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাইনি। তবে যদি অভিযোগ আসে এবং এর প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সে যতবড় নেতাই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"