সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান
সংসার চলে শাপলা বিক্রির টাকায়
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কমবেশি ১ হাজার পরিবার বিল থেকে শাপলা তুলে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শাপলা সংগ্রহকারী লোকজন সেই ভোরবেলা নৌকা নিয়ে বিলে চলে যান। তারপর সেখানে ঘুরে ঘুরে দুপুর পর্যন্ত শাপলা সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরেন তারা। এ পেশায় কোনো পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। তাই এখানকার বিভিন্ন বয়সের লোকজন শাপলা তুলে এবং তা বিক্রি করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার শাপলা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী লোকজন শাপলা বিক্রি প্রতিমাসে প্রায় ২ কোটি টাকা উপার্জন করছেন। শাপলা বিক্রি করে এখানকার অনেক লোকজন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
চলতি বছর বর্ষায় সিরাজদিখান উপজেলার ডুবে যাওয়া বিভিন্ন ইরি, আমন ধান এবং পাটের জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে শাপলা জন্মেছে। এছাড়া এ এলাকার ইছামতি খালের বিলের পানিতেও ব্যাপক শাপলা ফুল ফোঁটেছে তার সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য নিয়ে। সাধারণত, শাপলা ফুল জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। এদিকে রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলা বাজার এলাকায় শাপলার পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা কিনে নিয়ে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।
এদিকে লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলা বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এ সময় এক একজন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মোঠা শাপলা সংগ্রহ করতে পারেন। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্র করেন। পাইকার মল্লিকবাবু বলেন, তিনি শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০-২০০০ মুঠো শাপলা ক্রয় করে থাকেন। এক মুঠো শাপলার ২০ টাকা করে কিনা হয় তার। তারপর গাড়িভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার খরচ ১ টাকা, আড়ৎ খরচ ২ টাকাসহ ২৭-২৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়ৎতে প্রতি মোঠা শাপলা ৩৫-৩৭ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। অপরদিকে ইছামতি নদী থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. মনির হোসেন বলেন, তিনি ১১ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শাপলা তুলে বিক্রি করে সংসারের বাড়তি উপার্জন করে থাকি। এখন প্রতিদিন তার ১০০০-১৫০০ টাকার শাপলা বিক্রি করতে পারেন।
সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ শুভ্র এ বিষয়ে বলেন, শাপলার বৈশিষ্ট্য নিরাপদ সবজি, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মুক্ত। বর্ষা মৌসুমে সিরাজদিখানে প্রচুর শাপলা ফুল ফুটে। এখানকার শাপলা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী লোকজন শাপলা বিক্রি প্রতিমাসে প্রায় ২ কোটি টাকা উপার্জন করছেন। শাপলা বিক্রি করে এখানকার অনেক লোকজন স্বাবলম্বী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যদি আধুনিক চাষাবাদ হিসেবে আবাদ করা যায় তাহলে শপলা সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।
"