আনোয়ার হোসেন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রকৃতি

নজরকাড়া শাপলায় শিশুর বাড়তি আয়

প্রকৃতিতে বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও খাল বিল থেকে পানি সরেনি। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাফলা বিলের আকার বেশ বড়, সেই বিলে সারা বছরই পানি থাকে। সেই বিশাল বাফলা বিলের পানিতে ফুটেছে অজস্র শাপলা ফুল। নয়নজুড়ানো শাপলা ফোটা বাফলা বিলে যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছেন। এই শাপলা শুধু সৌন্দর্যই বিলায় না, এই শাপলা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে বিল পাড়ের স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশুরা।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রনচন্ডি ইউনিয়নের বাফলা গ্রাম, সেই পাশেই গ্রামের নামেই বাফলা বিল। প্রায় ৩৫০ বিঘা খাসভুক্ত জমিজুড়ে এই বিলের অবস্থান। সারা বছরজুড়ে পানি থাকে বিলটিতে।

বর্ষা শেষে প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। শরৎ বন্দনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এসো শারত প্রাতের পথিক, এসো শিউলি বিছানো পথে/এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে, এসো অরুণ কিরণ রথে/দলি শাপলা শালুক শত এসো রাঙায়ে তোমার পদতল/নীল লাল ঝড়ায়ে ঢল ঢল এসো অরণ্য পর্বতে...। শরৎ এলেই প্রকৃতি হেসে উঠে প্রাণের সজিবতায়। রঙ, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে হাজির হয় ঋতুর শরৎ। নিচে বিস্তীর্ণ সবুজ আর ওপরে বিশাল নীলাকাশ। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, সকালবেলা দুর্বাঘাসে জমা শিশিরবিন্দু, সেখানে সকালের নরম আলো প্রতিফলিত হয়ে মুক্তার মতো ঝিলিক দেয়।

ওই বিলের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে ফুটে থাকা অজস্র সাদা শাপলা প্রাণ প্রকৃতিকে মাতোয়ারা করে তুলেছে। এই জাতীয় ফুলটি শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, সেই সঙ্গে এনে দিয়েছে জীবিকার বাড়তি সুযোগও। পুষ্টিকর ও ভেষজ ঔষধিগুণ সবজি হিসেবে শাপলার কচি ডাঁটা ও শালুকের জুড়ি নেই।

শাপলার কদর গ্রাম ছাড়িয়ে শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। শাপলা গাছের নিচে জন্মানো শালুক পুড়িয়ে খাওয়া যায়। শাপলার ফলের স্থানীয় নাম ভ্যাট। এর ভেতর লাল সরিষার মতো দানা বীজ থাকে। সেগুলো শুকিয়ে খই তৈরি হয়। ভ্যাটের খইও গ্রামীণ মানুষের উপাদেয় খাবার। অপরদিকে পদ্ম ফলের ভেতরে থাকা মটরশুটির দানার মতো খাবারও বেশ মুখরোচক। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের কাছেও এর চাহিদা তৈরি হয়েছে।

শাপলার ডাঁটা ও ভ্যাটের খইয়ের চাহিদা-কদর থাকায় বিলপাড়ের স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশু শিক্ষার্থীরাও নেমেছে এসব সংগ্রহ করতে। শাপলা, শালুক, ভ্যাট ও পদ্ম ফল স্থানীয় বাজারসহ বিভাগীয় রংপুর শহরে বিক্রি করে পরিবারে আনছে বাড়তি আয়।

বিলপাড়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখিমনি, তানিয়া, আরফিনা, ইব্রাহিম বলেন, আমরা লেখাপড়ার ফাঁকে বিল থেকে শাপলার ডাঁটা, ভ্যাট, শালুক ও পদ্ম ফল তুলে এনে বাড়িতে দেই। বাবা কিংবা ভাই এগুলো স্থানীয় বাজারসহ রংপুর শহরে নিয়ে বিক্রি করেন। প্রতি আঁটির লতা ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করেন। একেকটি ভ্যাট ও পদ্ম ফল ৫ টাকা করে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি শালুক বিক্রি হয় ৪০/৫০ টাকা দরে। এতে খরচ বাদে ৩০০/৪০০ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে পোশাক ও লেখাপড়ার খরচ চলে।

স্থানীয় বাসিন্দা অহেদুল ইসলাম বলেন, শাপলার ডাঁটার সঙ্গে চিংড়ি মাছের তরকারির খুবই স্বাদ। এটা একটি জনপ্রিয় খাবার। শাপলার ভ্যাটের বীজ রোদে শুকিয়ে বালুভর্তি গরম কড়াইয়ে ছেড়ে দিলে খই হয়ে যায়। সেই খই দিয়ে মেলা ও উৎসব পার্বণে গুড়ের মোয়া তৈরি হয়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, শাপলা খুব পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সাধারণত শাকসবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলার রয়েছে প্রচুর ক্যালশিয়াম। শাপলায় ক্যালশিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি-প্রোটিন, ৩. ১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, শাপলার লতা তরিতরকারির মতো খাওয়া যায়। ভিটামিনসমৃদ্ধ এই লতা ইলিশ-ছোট মাছসহ পুঁইশাকের মতো ভাজি করে খাওয়া যায়। শাপলা চাষের জন্য বর্ষাকালে ভ্যাটের বীজ ছিটিয়ে দিলে প্রচুর পরিমাণে শাপলা গাছ হয়। যা বিনা চাষে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। বিশেষ করে প্রতি বছর বাফলার বিলে অজস্র শাপলা, শালুকসহ পদ্ম জন্ম নেয়। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ এগুলো তুলে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close