মো. আবদুল্লাহ, শেকৃবি
শেকৃবিতে নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি
নীতিমালা অনুযায়ী তার সিনিয়র পেশ ইমাম হওয়ার কোনো যোগ্যতা না থাকলেও স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নীতিমালার বাইরে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে মসজিদের মুয়াজ্জিনকে। পদোন্নতি পাওয়া ব্যক্তিটি হলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র পেশ ইমাম মো. আবুল কালাম। মোয়াজ্জিন হিসেবে যোগদান করে এবং সিনিয়র মোয়াজ্জিন হিসেবে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। তদবীর ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাগিয়ে নিয়েছেন পেশ ইমামের চেয়ার।
জানা গেছে, নিজেকে সবসময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য ও উলামা লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মো. আবুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে যোগদান করেন ২০০৪ সালে। এর তিন বছর পর তাকে প্রথম পর্যায়োন্নয়ন দিয়ে ইমাম পদে পদায়ন করা হয়। এর তিন বছর পর ২০১০ সালে দ্বিতীয় পর্যায়োন্নোয়ন দিয়ে সিনিয়র ইমামে পদায়ন করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মুয়াজ্জিন থেকে ইমাম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং দুটি পর্যায়োন্নয়ন পেতে কমপক্ষে আট বছর চাকরিতে থাকতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পদোন্নতির ধারা এবং চাকরির সময়কাল দুটিতেই ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। ২০১৫ সালে তাকে সিনিয়র ইমাম থেকে সিনিয়র পেশ ইমামে পদায়ন করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়র ইমাম থেকে প্রথমে পেশ ইমাম ও পরে সিনিয়র পেশ ইমামে পদায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে সিনিয়র ইমাম থেকে সরাসরি সিনিয়র পেশ ইমাম করা হয়েছে। এভাবে একই ব্যক্তিকে নিয়ে একাধিকবার পর্যায়োন্নয়ন, পদোন্নতি ও পদোন্নতির ধারা পরিবর্তন করে সুস্পষ্ট দুর্নীতি পরিলক্ষিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয় এবং মোয়াজ্জিন মো. আবুল কালামের মতো আরো ২৯ জন কর্মচারী একই প্রক্রিয়ায় পদোন্নতির আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন ও সুপারিশ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়, মো. আবুল কালামের পর্যায়োন্নয়নের প্রক্রিয়াটি যথাযথভাবে হয়নি এবং এ বিষয়টি পুনঃমূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সুপারিশ আমলে না নিয়ে তাকে পদে বহাল রাখে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
তৎকালীন গঠিত প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন ও সুপারিশ কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যথাযথ অনুসন্ধান করে একটি সুপারিশ প্রদান করি কিন্তু তৎকালীন প্রশাসন তা বিবেচনা করেনি এবং বিষয়টি সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে ২০১১ সালে পর্যায়োন্নয়ন সিলেকশন বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাকে যে প্রক্রিয়ায় ইমাম পদায়ন করা হয়েছিল সেটি সম্ভবত সঠিক ছিল না। তবে এটি তৎকালীন রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী সাহেব ভালো বলতে পারবেন। তৎকালীন রেজিস্ট্রার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এত আগের ঘটনা এখন ঠিক মনে নেই। আমাকে দু-এক জায়গায় কথা বলে ফাইল ঘেঁটে বলতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা বলেন, সে সময় বারবার তার পদায়নের বিষয়গুলো ছিল সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। তবে প্রশাসন নীতিমালা অনুসরণ না করে আদেশ জারি করেছে।
সামগ্রিক বিষয়ে অভিযুক্ত মো. আবুল কালাম বলেন, আমি জোর করে কোনো প্রমোশন নিইনি। সে সময় সিলেকশন বোর্ড করে আমাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের স্মরণিকায় তার ছবি প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছবি সে জায়গায় কে বা কারা ব্যবহার করেছে তা আমি জানি না। এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বতন্ত্র কোনো নীতিমালা প্রণয়ন হয়নি। তাই ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশ অনুযায়ী, যতদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিমালা প্রণয়ন না হবে ততদিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। শেকৃবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাই অনুসৃত হচ্ছে।
"