মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
নোয়াপাড়া চা-বাগান
সংকটে জর্জরিত, চলছে কর্মবিরতি
মাধবপুরের নোয়াপাড়া চা বাগান এখন নানা সংকটে জর্জরিত। দীর্ঘদিনের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ১০ মাস ধরে বাগানের কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তাই কারখানায় চা তৈরি করা যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়েছে শ্রমিকদের মজুরি, রেশন, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা এবং ঘরবাড়ি নির্মাণের ওপর। এসব দাবিতে ৪ দিন ধরে নোয়াপাড়া চা বাগানে কর্মবিরতি চলছে। ওই চা বাগানটি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের মালিকানাধীন।
বাগান সভাপতি কমেড নায়েক জানান, গত দুর্গাপূজার বোনাস এখনো দেওয়া হয়নি। তিন সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি তলব পরিশোধ করা হচ্ছে না। কাজ করে মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিকপরিবার মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। চা বাগানের হাসপাতালে এখন কোনো ডাক্তার ও ওষুধ নেই। শ্রমিকরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের থাকার ঘর বসবাসযোগ্য নয়। বৃষ্টিতে চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে ঘর ভিজে যায়। কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বাগানের কারখানা পুরোপুরি বন্ধ। বাগানের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতা সস্তায় অন্য বাগানে বিক্রি হচ্ছে। নোয়াপাড়া চা বাগানের ইতিহাসে এমনটি কখনো ঘটেনি। কারখানা চালু করতে না পারলে বাগান দিন ধ্বংসের দিকে যাবে। এতে কয়েক হাজার শ্রমিক পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়বে।
বাগান সেক্রেটারি মনি বাউরি বলেন, বাগানে শ্রমিকরা কাজ করে দৈনিক হাজিরা ১৭০ টাকা ও সাপ্তাহিক রেশন পাচ্ছেন না। বোনাস ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ করছে না। কারখানা চালু না হলে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। তিনি আরো বলেন, কারখানায় তৈরি চা পাতা বিক্রি করতে না পারলে সবুজ পাতা সংগ্রহ করে কি লাভ। সংগ্রহ করা চা পাতা খুবই কমদামে বিভিন্ন বাগানে বিক্রি হচ্ছে। এটি অপমানজনক।
মনি বাউরি আরো বলেন, নোয়াপাড়া চা বাগান একটি প্রথম শ্রেণির বাগান ছিল। এখন রুগ্ন বাগান হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এ কারণে গত শুক্রবার থেকে একটানা চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতিতে নেমেছে। বাগান ভালোভাবে চলুক এটা সাধারণ শ্রমিকরা চায়। কারণ বাগান একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকের রুটি রুজির বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বাগান চালাতে আন্তরিক নন।
নোয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আতাউল মোস্তফা সোহেল বলেন, নোয়াপাড়া চা বাগান আর্থিক সংকটে পড়েছে। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজ যোগ দিতে শ্রমিকদের অনুরোধ করেছি। তারা কাজে যোগ দিতে আন্তরিক হয়েছেন।
বাগানের ব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম ফরিদী বলেন, নোয়াপাড়া চা বাগানে দীর্ঘদিন ধরে সরকার ব্যাংক ঋণ বন্ধ রেখেছে। সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। এতদিন অনেক কষ্ট করে শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। এখন কারখানা বন্ধ, তাই চা পাতা তৈরি করে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তাই বাগান আরো লোকসানে পড়েছে। এখন শ্রমিকরা কর্মবিরতি বাদ দিয়ে সোমবার দুপুরে কাজে যোগ দিয়েছে।
"