সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদরগড় গ্রামের বাসিন্দা ৬৭ বছরের বৃদ্ধা ফুলেছা বেগম। কেমন আছেন, জানতে চাওয়া মাত্রই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, এ ধোপাজান নদী আমার একমাত্র ভিটে কেড়ে নিয়েছে। এখন আমার আর মাথা গুজার ঠাঁই নাই।

সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় প্রবাহিত ধোপাজান নদী। এ নদীতে রয়েছে খনিজসম্পদ। বিগত ৮ বছর ধরে এ নদীর ব্যাপারে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার কারণে ইজারা বন্ধ রয়েছে। তবে থেমে নেই বালু-পাথর উত্তোলন। অবৈধভাবে দিনে রাতে অনেকটা প্রকাশ্যেই প্রশাসনের নাকের ডগায় এমনকি পুলিশের সামনেই যান্ত্রিকভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করছে একটি চক্র। আর এসব বালু-পাথরবাহী বড় বড় বাল্কহেড (স্টিলবডি নৌকা) ধোপাজান চলতি নদী দিয়ে সুরমা নদী হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। ধোপাজান নদীর প্রবেশ মুখেই সদরগড় গ্রাম।

সদরগড় গ্রামের বাসিন্দা ৬৭ বছরের ফুলেছা বেগম বলেন, গত কয়েক মাস ধইরা আমার ঘরের সামনে দিয়া রাতে শত শত বড় স্টিলবডি নৌকা যায় উত্তাল ঢেউ তৈরি করে নদীর তীর ভাঙতাছে। সে সঙ্গে আমার একমাত্র ভিটেও চলে গেছে নদীগর্ভে।

ইজারাবিহীন ধোপাজান-চলতি নদী বালুমহালে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে অবাধে পাড় কেটে নিচ্ছে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। এতে হুমকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। রাত-দিন প্রকাশ্যে নদীর পাড় কেটে অবৈধভাবে বালু-পাথর লুট করেছে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। স্থানীয় ওই সিন্ডিকেট প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলছেন না কেউই।

অভিযোগ রয়েছে, রহস্যজনক কারণে পরিবেশ বিধ্বংসী এ কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতন পরবর্তী অস্থিতিশীল অবস্থার সুযোগে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে বালু-পাথরখেকো চক্র। তারা প্রকাশ্যে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন শেষে নৌকায় তা লোড-আনলোড, পাচার এবং ডাম্পিং করছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান-চলতি নদীর দুইপাড়ে ড্রেজার বসিয়ে পাড় কাটছে একাধিক সংঘবব্ধ চক্র। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কাইয়ারগাঁও, ডলুরা, হুড়ারকান্দা, ভাদেরটেক, লালপুর ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রভাবশালী চক্র। তারা ধোপাজান-চলতি ও সুরমা নদীতে চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত রয়েছে।

এদিকে বালু-পাথর পাচারের নিরাপদ পথ হিসেবে গজারিয়া নদীকে বেছে নিয়েছে বালিখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা। গজারিয়া নদী দিয়ে খরচার হাওর হয়ে সুরমা নদীতে নিয়ে কার্গোতে লোড করা হয় এসব বালু। পরে এগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাচার করা হয়। এদিকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু প্রায়ই জব্দ করা হলেও অসাধু সিন্ডিকেটের তৎপরতা থামছে না।

সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য জানান, পুলিশের সামনেই ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করছে একটা চক্র। তাদের কেউ কিছু বলছে না। আর এসব বালু-পাথর নৌকায় ভরে বিভিন্ন স্থানে যায়। এ সময় নদী তীরের বসতভিটা ধ্বংস হচ্ছে।

একই গ্রামের এক বাসিন্দা নামপ্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এত এত প্রশাসনের লোকজন পুলিশ আছে নদীতে- তারপরও কীভাবে ড্রেজার চলে আর কীভাবে এসব নৌকা বালু-পাথর নিয়ে বের হচ্ছে, আমরা আসলে হিসাব মিলাতে পারছি না। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী এ বিষয়ে জানালেন, ধোপাজান নদীতে অবৈধবাবে বালু-পাথর উত্তোলন হচ্ছে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাই। তিনি বলেন, আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এসব বন্ধে অভিযান পরিচালনা করব।

"