বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
৩ মাস ধরে পাথর আমদানি বন্ধ
স্থবির ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর, কর্মহীন ৬ হাজার শ্রমিক * পাথর আমদানিতে খরচ বেশি, লোকসানে ব্যবসায়ীরা * বেকার শ্রমিকদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন
তিন মাস ধরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এ বন্দর দিয়ে শুধু পাথর আমদানি করা হলেও খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যে তা বন্ধ করে দেন। ফলে বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
২০১৫ সালের ২১ মে কামালপুর লোকাল কাস্টমস (এলসি) স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তর করা হলেও একমাত্র পাথরনির্ভর বন্দরটি আলোর মুখ দেখেনি বন্দরটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর সীমান্তে লোকাল কাস্টমস (এলসি) স্টেশনটি চালু হয় ১৯৭৪ সালে। ২০১৫ সালের ২১ মে সালে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপ নেয় ধানুয়া কামালপুর এলসি স্টেশন। ধানুয়া কামালপুর বন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। বর্তমানে ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালুর লক্ষ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে ৩৪ প্রকারের পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও বর্তমানে শুধু পাথর আমদানি করা হয়। কিন্তু নানা কারণে এই বন্দর দিয়ে পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে।
অতিরিক্ত শুল্ক ও চার্জ আদায়, ভারতীয় পাথরের বেশি দাম, ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো পাথর আমদানি সুযোগ না দেওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পাথর আমদানি। এই বন্দরের শুল্ক বিভাগ যেখানে বছরে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেখানে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এক টাকাও রাজস্ব আদায় হয়নি এই বন্দরে।
পাথর ব্যবসায়ীরা জানান, পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রৌমারী বন্দরে ওয়ে ব্রিজ না থাকায় স্কেল দিয়ে পাথর পরিমাপ করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে পাথর আমদানি করে থাকে বেশি লাভবান হচ্ছে। আমাদের এখানে ওয়ে ব্রিজের মাধ্যমে পাথর পরিমাপ করার ফলে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করা হয়। যে কারণে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে শুল্ক কর্মকর্তা ও বন্দরের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা মনোভাবের কারণেও ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। তাদের দাবি বন্দরের কর্মকর্তারা রৌমারী বন্দরসহ পাশাপাশি অন্য বন্দরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরকে কোণঠাসা করেছন। ফলে সম্ভাবনাময় এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। এদিকে তিন মাস ধরে এই বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় খাঁ খাঁ করছে পুরো বন্দর। বন্দরে পড়ে রয়েছে পাথর ভাঙার ক্রাশার মেশিনগুলো। এতে করে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ৬ হাজার পাথর ভাঙা শ্রমিক। নিয়মিত পাথর আমদানি হলে নিজ এলাকাতেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এসব শ্রমিক। বন্দর পাথরশূন্য থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিক ও তাদের পরিবার। পাথর ভাঙা শ্রমিকদের দাবি দ্রুত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হোক।
বন্দরের পাথর ভাঙার শ্রমিকরা জানান, আমরা বর্তমানে বেকার অবস্থায় রয়েছি। পাথর আমদানি না থাকায় আমরা কাজ করতে পারছি না। এ কারণে আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান না হলে পেশা ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে আমাদের।
ধানুয়া কামালপুর বন্দরের শুল্ক বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ভারতের অভ্যন্তরের রাস্তাঘাট-দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া লাভের মুখ না দেখায় ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি শুরু করলে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দরের ট্রাফিব ইন্সপেক্টর জাবেদুল্লাহ জানান, আমদানি নেই। তবে এই বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। আমদানি-রপ্তানিকারক চাইলেই যেকোনো সময় পাথরসহ ৩৪টি পণ্য আমদানি করতে পারেন।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের চলমান সমস্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
জামালপুরের একমাত্র স্থলবন্দর ধানুয়া কামালপুরের কার্যক্রম জোরদার, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও স্থানীয় বেকার শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে উঠবে অপার সম্ভাবনাময় এ বন্দরটি- এমন আশা স্থানীয়দের।
"