আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাইলো সড়কের তাল বিক্রির টাকা আত্মসাৎ

উত্তরবঙ্গের মধ্যে একটি মাত্র সাইলো রয়েছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে। প্রায় ২০ বিঘা জমির ওপর সাইলোটির অবস্থান। সেখানে প্রথমে গম সংরক্ষণ করা হতো এবং পরে চাল সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাইলো সড়কে পাঁচ শতাধিকের অধিক তালগাছ রয়েছে। যে তালগাছ থেকে প্রতি বছর প্রচুর তাল ও তাল শাঁস হয়, সেসব বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। সেই আয় জমা হতো সরকারের কোষাগারে। সম্প্রতি সেই ঘটনার ছেদ ঘটেছে। সেই টাকা যাচ্ছে বর্তমান সাইলোর ভারপ্রাপ্ত সুপার ও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের পকেটে।

নিয়মানুসারে এই তাল বিক্রির অর্থ সরকারের রাজস্ব খাতে যোগ হওয়ার নিয়ম। গত কয়েক বছর সেই টাকা যাচ্ছে বর্তমান সাইলোর ভারপ্রাপ্ত সুপার ও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের পকেটে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত না। এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গেলেই ভয়ভীতি আর হয়রানির শিকার হতে হয়। সাইলোর অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা গেছে, এসব কাজে সুপারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন তার ড্রাইভার আসাদুজ্জামান খোকন। তিনি সুপারের সব অপকর্মেও সহযোগী বলে জানান তারা। সাইলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শাখার কর্মচারী সুমন হোসেনসহ অনেকেই জানান, চলতি বছরেও সাইলোর তালগাছগুলো থেকে পাওয়া লক্ষাধিক টাকার তাল ও তাল শাঁস বিক্রি করা হয়েছে। ড্রাইভার খোকনই তালগুলো ট্রাকবোঝাই করে বাইরে পাঠাতেন।

বিগত সময়ে যারা সাইলোর ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে ছিলেন তারা এসব তাল ও তালের শ্বাস সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাঝে বণ্টন করতেন। আর বাকিগুলো বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব খাতায় জমা করতেন। কিন্তু বর্তমান সাইলো সুপারের সিন্ডিকেট একচ্ছত্রভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। কোনো নিয়মনীতি মানছেন না তারা। ড্রাইভার আসাদুজ্জামান খোকন মোবাইল ফোনে জানান, তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে যা আদেশ করেন, তিনি তাই করেন। তিনি তার স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী তাল ট্রাকে করে যেখানে তার স্যার পাঠাতে বলেছেন সেখানে তিনি পাঠিয়েছেন। তবে কত টাকার তাল বিক্রি হয়েছে তা কিছুই জানেন না তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইলোর এক কর্মচারী জানান, সাইলো সুপার (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী সান্তাহারে গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে যোগদানের পর থেকে পুরো সাইলোকে তিনি নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি মনে করে আসছেন। তার ৩৩ বছরের চাকরি জীবনে এই রকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তিনি কখনো দেখেননি। কোনো কর্মচারীকে তিনি মূল্যায়ন করেন না। আর যারা মাস্টার রোলে চাকরি করছেন, তাদের মানুষের মর্যাদাই দেন না।

এই বিষয়ে সাইলো সুপার (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আফরোজ মুঠোফোনে জানান, সাইলো সুপারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই তিনি তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরো জানান, সাইলো সুপার সাংবাদিকদের সঙ্গে যে অশালীন ব্যবহার করেছেন তা সত্যিই দুঃখজনক। রাজশাহী বিভাগের সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহেদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, সাইলোর বিষয়টি সরাসরি অধিদপ্তর দেখভাল করে। অধিদপ্তরকে অভিযোগগুলো জানালে অধিদপ্তরই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অধিদপ্তর থেকে আমাদের যে নির্দেশনা প্রদান করবে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।

উল্লেখ্য, বর্তমান সাইলো অধীক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সাইলোতে রক্ষন প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কর্তব্যে অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close