মো. শাহ আলম, খুলনা
খুমেকে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা
৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ও কালো তালিকা করায় বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগের অধিকাংশ সেবা। এতে ভেঙে পড়েছে ওই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে আসেনি বহির্বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসক। ভোগান্তিতে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এসময় আরো ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেন কার্ডিওলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল। ফলে বুধবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে হাসপাতালে আসেনি অনেক চিকিৎসক।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ সমন্বয়ক সাজিদ হাসান বাপ্পী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণঅবাঞ্ছিত কার্যক্রম সঠিক হয়নি। এতে হাসপাতালের শত শত মানুষের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হবে। যে সব চিকিৎসক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিরীহ সাধারণ চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে খুলনা মহানগর বিএনপি নেতারা সাংবাদিকদের বলেন, যে বা যারা চিকিৎসকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তাদের সঙ্গে খুলনা মহানগর বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে ঢালাওভাবে পদত্যাগ বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা বিএনপি সমর্থন করে না। এরপর দুপুর ১ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা এবং খুলনা মহানগর ও ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতারা সদ্য পদত্যাগে বাধ্য হওয়া উপপরিচালকের রুমে যান এবং তাকে মোবাইলে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এর আগে সকাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যত অচল হয়ে যায়। বর্হিবিভাগে বেশিরভাগ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় তাদের দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে যায় চিকিৎসা না পেয়ে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান। আর ৫১ চিকিৎসককেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে খুমেকের চিকিৎসা সেবা।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ৪০ পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে ২০ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া আন্তঃবিভাগে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, কনসালট্যান্টসহ আরো ২১ চিকিৎসকের দেখা নেই। এতে পুরো হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থার বেহালদশা। রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বাগেরহাট থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কুলসুম বেগম বলেন, ব্রেস্ট টিউমার নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কাউন্টারে টিকিট কেটে নির্ধারিত কক্ষে এসে দেখি ডাক্তার নেই। এখন ফেরত যেতে হবে। কবে এ অবস্থা ঠিক হবে জানি না।
প্রায় একই অভিযোগ ছিল আরো অন্তত ১০ জন রোগীর যারা টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাতে না পেরে ফিরে গেছেন। এসব বিষয়ে খুমেকের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এবং আরএস কেউ কর্মস্থলে না থাকায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সদ্য পদত্যাগে বাধ্য হওয়া হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আকতারুজ্জামান বলেন, আমি গতকাল কনফারেন্সরুমে চিকিৎসা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষ হলে কয়েকশ মেডিকেল শিক্ষার্থী এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরে হুমকি দিয়ে জোর করে দুটি কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেয়। এর মধ্যে একটি আমার পদত্যাগ অন্যটি ৫১ জন চিকিৎসকের অবাঞ্ছিত ঘোষণা। আসলে সরকারি চাকরি করি কখনো কোনো দল করি নাই। এখন এভাবে লাঞ্ছিত হতে হলে কিভাবে চাকরি করব। প্রশ্ন করেন তিনি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুর্শিদ বলেন, হাসপাতাল সরাসরি আমাদের অধীনে না। তারপরও আমি বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের চাপে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আকতারুজ্জামান পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে হাসপাতালের ৫১ জন চিকিৎসককে সব ধরনের সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদের হাসপাতালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এ ৫১ জন চিকিৎসকের মধ্যে পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন।
"