reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাক্ষাৎকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের অংশ ছাত্ররাজনীতি

অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। স্বনামধন্য এ শিক্ষাবিদ অন্তর্র্বর্তী সরকার ও শিক্ষক-ছাত্ররাজনীতিসহ দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশিকুর রহমান শুভ, সঙ্গে ছিলেন মো. জামিন মিয়া।

প্রশ্ন : লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সবচেয়ে বড় গণ-অভ্যুত্থান বলে আখ্যা দিয়েছেন। আন্দোলন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ আসলে কী?

অধ্যাপক লুৎফর রহমান : কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে প্রথম আন্দোলনটি হয় ২০১৮ সালে। সেসময় ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা একেবারে বাতিল করে দেয় তৎকালীন সরকার। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে সরকারি চাকরি কোটা পুনর্বহাল করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। ২০২৪ সালে আদালতের একটি রায়ে কোটা ব্যবস্থাপনার পুনর্বহাল হলে ছাত্ররা পুনরায় কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নামেন। এই আন্দোলনকে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরা এমনকি প্রধানমন্ত্রী নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে থাকে। আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলেও ট্যাগ লাগানো হয়। আন্দোলন দমন করতে ছাত্রদের একের পর এক গুলি করে হত্যা করতে থাকলে একপর্যায়ে সাধারণ জনতাও ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়। শুরু হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশে সংঘটিত অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কারোই বুঝতে বাকি থাকে না যে, ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটি বড় গণ-অভ্যুত্থান।

প্রশ্ন : নবীন ও প্রবীণ মিলিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন করা হলো। এই সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

অধ্যাপক লুৎফর রহমান : স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্র্বর্তী সরকার দেশ চালানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই সরকারে দুজন উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা সমন্বয়কারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের মানুষ এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তরুণদের জায়গা দেওয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। তবে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের যে চেতনা এবং তরুণ প্রজন্মের যে প্রত্যাশা তা যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেদিকে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে এই সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে এটি আমাদের সবারই প্রত্যাশা।

­প্রশ্ন : আপনি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। আপনি কি কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন?

অধ্যাপক লুৎফর রহমান : আমি দীর্ঘদিন সিন্ডিকেট ও সিনেটে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দুই মেয়াদে একটি হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। যে ফোরামেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি সেখানেই ছাত্র-শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। ২০২২ সালের সিনেট অধিবেশন সভায় গেস্টরুম কালচার ও ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হয়েছিল এবং আমাকে অপমান করা হয়েছিল। আমি এবং আমার বন্ধু সিনেট সদস্য অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বাধ্য হয়ে অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেছিলাম। ২০২৩ সালেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলায় আমাকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে এবং একজন প্রো-উপাচার্য আমার বক্তব্য নিয়ে তিরস্কার করেছেন। জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার যে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সেখানেও আমি আমার অবস্থান থেকে ছাত্রছাত্রীদের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতেও ছাত্রদের যেকোনো অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তাদের পাশে থাকব।

প্রশ্ন : অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উপাচার্য পেল। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

অধ্যাপক লুৎফর রহমান : নিশ্চয়ই নতুন উপাচার্য একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি যোগদান করার পরপরই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও প্রত্যাশার জায়গাকে আমলে নিয়ে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সব মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবেন, তার কাছে এটি আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু নানান বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক বেশি সেনসেটিভ জায়গা। একাডেমিক কাজে, চিন্তায়, পরিকল্পনায় ও তার বাস্তবায়ন দক্ষতায় নতুন উপাচার্যের কোনো ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করি না। সব স্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করলে নিশ্চয়ই তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন এবং শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণে সফল হবেন।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক রাজনীতি বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবি তোলা হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অধ্যাপক লুৎফর রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার ১৯৭৩ অনুযায়ী শিক্ষকদের রাজনীতি করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আর ছাত্র রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়ে রাজনীতিবিদ তৈরি হয় যারা পরবর্তীতে এমপি হন, মন্ত্রী হন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে দেশ প্রকৃত রাজনীতিবিদ তৈরি থেকে বঞ্চিত হবে। ছাত্র রাজনীতি থাকবে, ভিন্নমত ও আদর্শ থাকবে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো দলের লেজুরভিত্তিক করা থেকে ছাত্র রাজনীতিকে দূরে রাখতে হবে। ছাত্ররাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব, হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে। সেজন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

লুৎফর রহমান : ধন্যবাদ আপনাদেরও। প্রতিদিনের সংবাদের পাঠকদের শুভেচ্ছা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close