প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গবেষণা
মারমোসেট বানর সঙ্গীকে নাম ধরে ডাকে
এত দিন শুধু মানুষ নিজেদের স্বতন্ত্র নামে আলাদা করে ডাকে বলে শোনা যেত। এরপর গবেষণায় ওঠে এসেছে মানুষ ছাড়া বিশেষ এই ক্ষমতাটি আছে শুধু বোতলনাক ডলফিন এবং আফ্রিকান হাতিদের। সম্প্রতি এই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে নতুন আরেক প্রজাতির প্রাণী।
গত বৃহস্পতিবার ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা বলছে, মারমোসেট বানরদেরও ওই দলে যোগ দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। খরব : বিবিসির।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় এই চমকপ্রদক তথ্যটি ওঠে এসেছে যে মারমোসেট বানররা নিজেদের ‘আলাদা আলাদা নামে চিহ্নিত করতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, মারমোসেট প্রজাতির পিগমি বানররা একে অপরকে ডাকতে তীক্ষè কণ্ঠে নির্দিষ্ট স্বর মাত্রা ব্যবহার করে।
আন্তর্জাতিক এক বার্তা সংস্থাকে এই গবেষণা দলের জ্যেষ্ঠ লেখক ডেভিড ওমার বলেন, ‘আমরা সামাজিক আচরণের বিষয়ে খুব আগ্রহী, কারণ আমরা মনে করি সামাজিক আচরণের কারণেই মূলত মানুষকে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বিশেষ মনে করা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দ্রুত দৌড়াতে পারি না, উড়তে পারি না, সামাজিক হওয়া ছাড়া মানুষের বিশেষ কোনো দক্ষতা নেই।’
ওমার মনে করেন, মানুষের মধ্যে কীভাবে সামাজিক আচরণ এবং ভাষার বিবর্তণ হয়েছে সেটা বোঝার জন্য মারমোসেট বানররা আদর্শ উদাহরণ। কারণ মানুষের মতোই এদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানুষের মতোই এদের একক পরিবার রয়েছে। ছয় থেকে আট সদস্যের পরিবার হয় তাদের। মানুষের মতো করেই তারা তাদের শিশুদের লালন-পালন করে। স্নাতক শিক্ষার্থী গাই ওরেনের নেতৃত্বে গবেষকরা মারমোসেটের স্বাভাবিক কথোপকথন রেকর্ড করেছেন।
পরে তারা তাদের ধারণ করা রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখেন, এই বানরগুলো একে অপরকে সম্বোধন করার জন্য আলাদা স্বর ব্যবহার করছে। একেকজন একেক স্বরে একে অপরকে সম্বোধন করে। আশ্চর্যের বিষয়, তারা এই সম্বোধন শনাক্ত করে সাড়াও দেয়। গবেষকরা তিনটি পৃথক পরিবার থেকে দশটি মারমোসেটের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় আরো জানা গেছে, মানুষের উপভাষা বা উচ্চারণের মতোই একেকটি মারমোসেট পরিবারের সদস্যরা নাম নির্ধারণের জন্য একই ধরনের শব্দ ব্যবহার করে।
ধারণা করা হয়, মারমোসেট বানররা তুলনামূলকভাবে মানুষের দূরবর্তী আত্মীয়। গবেষকরা মনে করেন, মানুষের সঙ্গে এদের বিভাজন প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর আগে হয়েছিল। অন্যদিকে শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে মানুষের এই বিভাজনের সূত্রপাত হয়েছিল ৫০ থেকে ৭০ লাখ বছর আগে।
কীভাবে এবং কখন মানুষ প্রথম কথা বলতে শুরু করেছিল তা পরিষ্কার না হলেও সামাজিক প্রাণী হিসেবে ‘মানুষই প্রথম কথা বলতে শুরু করেছিল’, এই দাবি অনেক বিজ্ঞানীই প্রত্যাখ্যান করেছে।
গবেষকরা বলেন, ‘মানুষে ভাষার বিবর্তণ সম্পর্কে আমরা এখনো প্রাইমেটদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।’ তিনি আরো বলেন, মারমোসেটের কথাগুলো মেশিন-লার্নিং মডেল ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য মারমোসেট কথোপকথন আরো বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার করা হতে পারে।
"