শাবিপ্রবি ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও শাবিপ্রবির ভিসির পিএস-এপিএসের পদত্যাগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফা আলটিমেটামের পর পদত্যাগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সদ্য বিদায়ি উপাচার্যের পিএস মো. কবির উদ্দীন ও এপিএস মো. সাঈদুর রহমান ভূঁইয়া। গতকাল বুধবার দুপুরে তারা নিজেদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের পর গত ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন উপাচার্য, উপউপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মেডিকেল প্রশাসক, পরিবহণ প্রশাসক, গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, প্রক্টরিয়াল টিম ও ৬টি আবসিক হলের প্রভোস্ট বডির সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের আলটিমেটামের পর পদত্যাগ না করায় প্রশাসনকে নির্লজ্জ উল্লেখ করে ফের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম। এতে করে গতকাল পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি দপ্তরের (আইআইসিটি) পরিচালক অধ্যাপক ড. এম জহিরুল ইসলাম ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (আইএমএল) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর তৈমুর, লাইব্রেরি প্রশাসক অধ্যাপক ড. আজিজুল বাতেন।
এছাড়া আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহসিন আজিজ খান, অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হাকিম ও সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাইল, প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক একেএম ফেরদৌস পদত্যাগ করেছেন বলে রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়। দ্বিতীয় দফা আলটিমেটামের পরেও চিফ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ হাবিবুর রহমান, মহাবিদ্যালয় পরিদর্শক তাজিম উদ্দিন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুজিবুর রহমানের পদত্যাগের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন এবং আলটিমেটামের মুখে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগপত্রে ড. সৌমিত্র শেখর উল্লেখ করেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আমি ১৪/০৮/২০২৪ তারিখ থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’
গত ৬ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের প্রধান দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ৭ দফা দাবি পূরণ। শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। এছাড়া দলীয় শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়।
৭ আগস্ট প্রশাসনিক কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন আনা হয় এবং উপাচার্য নিজেও বিভাগের দায়িত্ব পরিবর্তন করে মার্কেটিং বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। গত ৯ আগস্ট শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। ১১ আগস্ট নজরুল ভাস্কর্যের পাদদেশে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন ১২ আগস্ট, শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ শুভ উপাচার্যকে ‘দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। গতকাল বুধবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাংলো, শিক্ষক ডর্মেটরি এবং বিভিন্ন অনুষদ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ড. সৌমিত্র শেখর পদত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, ড. সৌমিত্র শেখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
"