প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১০ আগস্ট, ২০২৪

প্রকৃতি

হুমকির মুখে সবচেয়ে বড় ‘প্রাকৃতিক বিস্ময়’

সমুদ্রের তাপমাত্রা ৪০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ’ হুমকির মুখে পড়েছে বলে সম্প্রতি সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলীয় গবেষকদের নতুন এক গবেষণায় ওঠে এসেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বন্ধ না হলে এই ‘প্রাকৃতিক বিস্ময়’ হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আর টিকে থাকবে না।

গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’ এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, এ বছর ‘গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ (জিবিআর)’-এর আশপাশে থাকা সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪০০ বছরেরও বেশি সময়ের হিসাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এ গবেষণার প্রধান লেখক বেঞ্জামিন হেনলি মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রবাল প্রাচীরটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আমরা যদি নিজেদের বর্তমান পরিকল্পনা থেকে সরে না আসি, তবে আমাদের প্রজন্ম হয়তো পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময়, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের বিলুপ্তি দেখতে পাবে।’

‘পৃথিবী নিজের একটি আইকনকে হারাচ্ছে’ বলেন ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নেএর প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হেনলি।

কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানোর মতো মানবসৃষ্ট কার্যকলাপের কারণে জিবিআরের আশপাশের তাপমাত্রা ১৯০০-এর দশক থেকে ক্রমশই বেড়ে চলেছে, যার ফলে কয়েক শতাব্দী পরিবেশের স্থিতিশীল অবস্থায় থাকার পর বিপজ্জনক বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তাই এ গবেষণার লেখকরা ১৯৬০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দশক প্রতি (জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত) গড় বার্ষিক উষ্ণায়নের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেছেন, যা ছিল শূন্য দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (শূন্য দশমিক ২২ ফারেনহাইট)।

গবেষণায় বলা হয়, এই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের আশপাশে সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ‘বিস্ময়করভাবে’ বেড়ে যাওয়ায় এখানে ধারাবাহিক ‘ব্লিচিং’-এর মতো ঘটনা ঘন ঘন লক্ষ করা গেছে, যা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

এমনকি ২০১৬ সালের পর থেকে প্রবাল প্রাচীরটি পাঁচটি গ্রীষ্মে ব্যাপক ব্লিচিংয়ের অভিজ্ঞতা পেয়েছে, যখন তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে, বিভিন্ন প্রবাল এদের রং হারাতে শুরু করে। কারণ এদের পুষ্টি ও রঙের জন্য যেসব শৈবাল দায়ী সেগুলো অতিরিক্ত তাপমাত্রায় চাপের মধ্যে পড়ে।

গবেষণায় দেখা মিলেছে, গত চার শতাব্দীর ছয়টি উষ্ণতম বছরের মধ্যে পাঁচটিতেই এই ব্লিচিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ গবেষণার সহ-লেখক হেলেন ম্যাকগ্রেগর প্রবাল প্রাচীর সম্পর্কে ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’ ও এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে তিনি ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করেছেন। ‘এইসব প্রবাল চারশ বছর ধরে টিকে আছে ও ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম তাপমাত্রার অনুভব করছে। আর এগুলোই প্রবাল প্রাচীরের রেডউড গাছ।’

এ গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে এমন এক ‘অসহনীয় পর্যায়ের’ কাছাকাছি ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেখান থেকে এটি স্বাভাবিক অবস্থায় নাও ফিরতে পারে। এমনকি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রেও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ড, যা আগে ছিল না তা বিশ্লেষণ করার জন্য বিজ্ঞানীদের দলটি প্রবালের মধ্যে ড্রিল করে ও ১৬১৮ সালের গ্রীষ্মকালীন সমুদ্রের তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য গাছের রিং গণনার মতো বিভিন্ন নমুনাও বিশ্লেষণ করে। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক জীবনের আবাসস্থল এই প্রবাল প্রাচীরটি, যেখানে ৬০০ প্রজাতির প্রবাল ও ১৬২৫টি মাছের প্রজাতি রয়েছে। এটি অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন শিল্পের জন্য বড় আশীর্বাদ। দেশের অর্থনীতিতে এর বার্ষিক অবদান প্রায় চারশ ২০ কোটি ডলার। তবে নতুন এই গবেষণার ফলাফল এই বিতর্কে ঘি ঢেলেছে যে, প্রবাল প্রাচীরটিকে ‘বিপন্ন জায়গা’ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত যাতে পর্যটনের ক্ষতি না হয়। এজন্য দেশটির পর্যটন তালিকা থেকে একে দূরে রাখার চেষ্টা করছে অস্ট্রেলিয়া।

চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এদিকে গত ১২ মাসে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি দেখা গেছে, পাশাপাশি যা রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণতম। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, গোটা বিশ্ব চেষ্টা করছে যাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় বা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর না যায়। তবে প্রবালের ক্ষেত্রে, দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিও ৯৯ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্ন করার মতো যথেষ্ট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close