ইসমাঈল সিরাজী
রাজধানীজুড়ে ডাকাত আতঙ্ক
রাত যত গভীর হয় ততই বাড়তে থাকে রাজধানীবাসীর আতঙ্ক। গত কয়েকদিন নানা রকম গুজবে রাতভর নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে মানুষ। গত বুধবার রাত ১১টার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ডাকাত দলের হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদে মসজিদে চলে ডাকাত থেকে সতর্ক ও সজাগ থাকার নির্দেশনা।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর গত ৫ আগস্ট প্রাণ বাঁচাতে অনেক থানা শূন্য করে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। অগ্নিসংযোগ আর ভাঙচুর করা হয় কয়েকশ থানা। আহত ও নিহত হয় অনেক পুলিশ সদস্য। পরদিন থেকে সারা দেশে কর্মবিরতির ডাক দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন। এতে সারা দেশের সব থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
রাজধানীর অনেক এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পাড়া-মহল্লাভিত্তিক ছাত্র-জনতা টহল দিচ্ছে। যে দলে যোগ দিয়েছেন ছেলে থেকে বুড়ো, সব বয়সি মানুষ। কারো গতিবিধি সন্দেহজনক হলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি। শুধু পথচারী নয়, রাস্তায় চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনও থাকছে তল্লাশির তালিকায়।
রাজধানীর ধানমন্ডি, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, বসিলা, আদাবর, উত্তরা, মিরপুর, ডেমরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ডাকাতদলের হামলার তথ্য পাওয়া যায়। অনেকে এলাকায় আবার ডাকাত না থাকলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ডাকাত থেকে বাঁচতে সেনাবাহিনীকে জানালে টহল টিম তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত হয়ে কয়েকজন ডাকাতকে আগ্নেয়াস্ত্র আটক করে। এসব ঘটনায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং রাজশাহী মিলে প্রায় ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিরপুর ১৪ নম্বরের সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবির হোসেন জানান, তাদের হাউজিং কমপ্লেক্সের ভেতরে ডাকাতরা ঢুকে পড়েছিল বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী আবু তোরাব বলেন, বুধবার সকাল থেকে তাদের ৪৩ জনের দল ভাগ হয়ে পাহারা শুরু করেছে। কোনো হামলা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি হতে দেবেন না। একই সঙ্গে এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হাতে লেখা প্রচারপত্র বিলি করছেন।
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দা মো. কাইয়ুম বলেন, বুধবার গভীর রাতে একদল লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের পাশের বাসায় এসে হামলা করে। জোরপূর্বক বাসার মূল ফটক খুলে তারা টাকা, অলংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে থানাগুলোকে সক্রিয় করা না হলে এ ধরনের ঘটনা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। গত বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরা ও গোপীবাগের জর্জগলিতেও ডাকাতি হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাত দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত জর্জগলির দুটি বাসায় প্রচণ্ড আওয়াজ ও চিৎকারের আওয়াজ শোনা যায়।
মোহাম্মদপুরের হুমায়ূন রোড খেলার মাঠ এলাকায় ডাকাত-আতঙ্ক ছড়ায় ভোর ৪টা দিকে। সেখানকার ৩/৫ নম্বর ভবনের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, রাত ৩টার দিকে বাড়ির সামনের খেলার মাঠের চারপাশে ওই এলাকার নিরাপত্তা প্রহরীরা বাঁশি বাজিয়ে চিৎকার করে সবাই নিচে নেমে আসার আহ্বান জানান। অনেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এর কিছুক্ষণ সময় পর সেনাসদস্যরা এসে মাঠের পাশের রাস্তায় অবস্থান নেন। তবে ওই এলাকায় কোনো বাসায় ডাকাতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
হাউজিংয়ের পাশে একটি ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের আবাসনে হামলা হচ্ছে বলে খবর ছড়ালে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। এমন অস্বস্তিকর অবস্থার অবসান চান নগরবাসী। তারা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুতই থানা-পুলিশের কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। এদিকে, ছাত্র-জনতা জানিয়েছে, পুলিশি টহল শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক এমন টহল চলমান থাকবে।
"