তুহিন খান নিহাল
যাত্রীকে এক শিক্ষার্থী
‘বস, দেশটা আমাদের হেলমেট পরতে হবে’
রাজধানী বনানীর কাকলী সিগন্যালে রাইডশেয়ারিং উবারের একটি বাইক এসে থামল। পেছনে বসা একযাত্রী হেলমেট হাতে নিয়ে বসে আছেন। হঠাৎ সেটি চোখে পড়ল এক শিক্ষার্থীর তিনি বললেন বস, দেশটা আমাদের, প্লিজ হেলমেট পরতে হবে। ছাত্রের এমন বিনয়ী আচরণে তাৎক্ষণিক হেলমেট পরে নিলেন যাত্রী। সেই সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘তোমাদের দিয়েই নতুন কিছু সম্ভব।’ এটি শুধু ঢাকার একটি সিগন্যালের চিত্র। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন বিনয়ী আচরণে তৃতীয় দিনের মতো সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তাদের পরনে নরমাল পোশাক, হাতে বাঁশি, কিংবা লাঠি, কেউবা হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করছেন ট্রাফিক।
পাশাপাশি ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও গণপরিবহনগুলো নির্ধারিত জায়গায় থামার নির্দেশনাও দিচ্ছেন তারা। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন শিক্ষার্থীরা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তারা মানুষকে নিয়মশৃঙ্খলা শেখাচ্ছেন।
গতকাল সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিগত দুই দিনের তুলনায় সড়কে দায়িত্ব পালনরত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। রাস্তায় ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবী ও মাদরাসার ছাত্রদেরও।
রাজধানীর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আলী নামের এক শিক্ষার্থী গুলশান-১ সিগন্যালে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই শিক্ষার্থী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যত দিন ট্রাফিক পুলিশ না আসে আমরা রাস্তায় থাকব। আমরা ছাত্ররা সিগন্যালের পাশাপাশি গাড়িগুলো যেন লাইন ধরে চলে সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। সবার কষ্ট হচ্ছে, ভালো লাগছে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে। অভিজ্ঞতাও হচ্ছে।
ট্রাকচালক আবুল জানান, ‘ছাত্ররা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা সত্যিই অসাধারণ। সারা দিনে কোথাও কোনো রকমের চাঁদা দিতে হয়নি। এই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। আমরা অনেক খুশি। ছাত্রদের পাশে আছি।’
এদিকে গতকাল রাজধানীর পুলিশ প্লাজার সামনে ট্রাফিক আইন অমান্যকারী এক বাইক ড্রাইভারকে জরিমানা স্বরূপ ১০ মিনিট ছাত্রদের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করেন তেজগাঁও কলেজের এক শিক্ষার্থী। এ সময় বাইক ড্রাইভারও বিনা সংকুচে ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় কাজ করেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার শেখ হাসিনার পতনের পর প্রশাসনিক শূন্যতা দেখা দিয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি রাজধানী ও দেশের অনেক স্থানে নেই পুলিশ। সড়কে নেই কোনো ট্রাফিক। ফলে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে মঙ্গলবার থেকে রোদবৃষ্টির মধ্যে কাজ করছেন ছাত্ররা। পুলিশের অনুপস্থিতিতে তারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন ট্রাফিকের দায়িত্ব। তাদের কাছ দেশের মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
"