প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল
চৌদ্দগ্রামে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। * কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি।
টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে খালসহ ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশংকা। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রবল বর্ষণে একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, দোকানপাট ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীরা। অনেক রোগীর স্বজনকে তাদের কাঁধে ও কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেখা গেছে। এদিকে, কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল বৃষ্টি না হওয়ায় বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমেছে। উপকূলীয় ও নিচু এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে দুর্গতদের মধ্যে।
বান্দরবান থেকে মো. শাফায়েত হোসেন জানান, সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বসতবাবী, ইসলামপুর, আর্মি পাড়া, শেরে বাংলা নগর, মেম্বার পাড়াসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক পরিবার। এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যেতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া ঘুমধুম ইউনিয়নের লোকজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ভেতরের ক্রোকোডিংগা, বড়খাল, মুরুংগা খালসহ ফকিরা বাজারের পাহাড়ি ঢলের পানি ঘুমধুম সীমান্তখাল দিয়ে আসায় ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী মধ্যমপাড়া, কেনারপাড়া, বাজারপাড়া, হিন্দুপাড়া, পশ্চিমকূল, ক্যাম্প পাড়ার বাড়িঘর ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে কয়েকটি পাড়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তুমব্রু বাজারের দোকানপাট জলাবদ্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে বালি এসে অনেক জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নে অনেক পাকা রাস্তাও নষ্ট হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যাচাই-বাচাই করতে ভাইস চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনকে সভাপতি ও উপজেলা প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করে কমিটি করা হয়েছে। তারা সরজমিনে ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে ও বন্যায় সাঙ্গু নদীর তীরে কবলিত সাধারণ মানুষকে আশ্রয় দিতে রুমা উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নের ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেছেন, দুর্যোগকালীন সময়ে সাধারণ মানুষকে জরুরি সেবা দিতে ‘হেল্প ডেস্ক’ খোলা হয়েছে। তাছাড়া পাহায়ের পাদদেশে অবস্থান করা মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আসতে মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনেন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ৭ উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে তাদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) থেকে গোলাম রসুল জানান, তিন দিনের টানা বর্ষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির পানিতে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, দোকানপাট ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থধ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। রোগীদের কাঁধে ও কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেখা গেছে স্বজনদের।
এদিকে, ভারতের উজানের পানির চাপ থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাল দখল হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফলে এক রকম ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই অঞ্চলের কৃষকরা।
পৌরসভার দক্ষিণ নোয়াপাড়া গ্রামের শাহিন মিয়া বলেন, বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। খাল ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা আসা রহিমা বেগম বলেন, দুই দিন অসুস্থতায় ভুগছি। তাই বাধ্য হাসপাতালে এসে দেখি নৌকা ছাড়া জরুরি বিভাগে যাওয়া সম্ভব না। পরে কোনো উপায় না পেয়ে স্বজনদের কোলে করে হাসপাতালে যাই।
উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামে কাজী মানিক বলেন, টানা বৃষ্টির পানিতে বীজতলা থেকে শুরু করে সব তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ দেখা যাচ্ছে না। অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকা একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। পানির প্রবাহ বন্ধ করে যারাই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার থেকে সাইফুর রহিম শাহীন জানান, গতকাল ও আগেরদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বাকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে দুর্গতদের মধ্যে। এখনো কিছু উপকূলীয় এলাকায় পানি থেকে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছেন। এর আগে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। এতে জেলার ৭ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের উপকূল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে পানি নেমে যাওয়ায় চকরিয়া মানিকপুর সড়ক, রামু নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কসহ জেলার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সাজারের ৭ উপজেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৪৭ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো অর্থ সাহায্য ও ত্রাণ দেওয়া হবে।
"