কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ০৪ আগস্ট, ২০২৪

ভুয়া এনআইডিতে জমি আত্মসাতের চেষ্টা

কুষ্টিয়ায় ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ভুয়া দাতাণ্ডগ্রহীতার মাধ্যমে শতকোটি টাকার জমি আত্মসাৎ চেষ্টার মামলায় সাবেক জেলা পরিষদ চেয়াম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম এবং ৬ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জালিয়াতি চক্রের ৪১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে কুষ্টিয়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।

৩০ জুলাই গত মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়া সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত ও কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা চাঞ্চল্যকর এই জালিয়াতি মামলার ৩০৫নং অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করা হয়। কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর বেঞ্চ সহকারী মতিউর রহমান এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা মামলাটি পর্যায় ক্রমিক তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক আকিবুল ইসলাম, সহকারী পরিদর্শক সুজিত কুমার কর, সহকারী পুলিশ সুপার দেওয়ান আবুল হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক হারুন অর রশীদ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী কুষ্টিয়া শহরের এন এস রোডের বাসিন্দা এম এম এ ওয়াদুদ। বাদীর পৈতৃক সম্পত্তির ওয়ারিশান হিসেবে গোটা পরিবারের ৬ সদস্যের এনআইডি জালিয়াতি করে শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখল করে একটি প্রভাবশালী চক্র। ২০১৭ সাল থেকে জালিয়াত চক্রটি জাল দলিল করে এবং এম এম এ ওয়াদুদসহ তার স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে এনআইডি জাল করে। এগুলো কাজে লাগিয়ে সব সম্পত্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নেয়। এর বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সিআইডি ওই দলিল জব্দ করে। কিন্তু তারা আবার নকল দলিল তৈরি করে এম এম এ ওয়াদুদ ও তার পরিবারের সদস্য সেজে শতকোটি টাকার সম্পত্তি আমলাপাড়ার মহিবুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেয়।

মামলার বাদী এম এম এ ওয়াদুদ জানান, ‘জাল এনআইডিগুলো নির্বাচন কমিশন বন্ধ করে দেওয়ার পরও এগুলো ব্যবহার করে জালিয়াত চক্রটি রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির সাহায্যে একাধিক দলিল করে। বিষয়টি টের পাওয়ার পরই ২০১৯ সালে আমি জালিয়াতির অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করি।’ মামলাটির তদন্ত শেষে জমা আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে কুষ্টিয়ার পূর্ব মজমপুরের মৃত মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে আসাদুর রহমান বাবু (৫১), তৎকালীন কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজন, আমলাপাড়ার হাজী মোহাম্মদ আলীর ছেলে মহিবুল ইসলামসহ ৪১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন পলাতক আছেন আর বাকি সবাই জামিনে মুক্ত আছেন। এই তালিকার ১৪ নাম্বারে রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলামের নাম।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমরা পুঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত করে সত্যতার ভিত্তিতে চার্জশিট দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘মামলাভুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াও হাজী রবিউলের বিরুদ্ধে এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সঙ্গে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণাদি মামলার নথিপত্রে সংযুক্ত আছে। এ ছাড়া মামলার প্রধান দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এই এনআইডি জালিয়াতি ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় হাজী রবিউলের প্রত্যক্ষ ইন্ধন, প্ররোচনা ও সার্বিক সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন। জিয়াউদ্দিন বলেন, আমরা ৩৫ জনের নামোল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছি, এর বাইরে ৬ জনেরর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলেও তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় তাদের বিষয়ে আদালতকে অবহিত করেছি। এখন শুনানির দিন ধার্য করলে সেখানে আদালত নথিপত্র দেখে পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি করে সিদ্ধান্ত ও আদেশ দেবেন। তবে চার্জশিটের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান হাজী রবিউল ইসলাম। তিনি এসব কোনো জালিয়াতির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close