মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী
ঐতিহ্য
রপ্তানি হচ্ছে পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
এক সময় গৃহস্থালি কাজের মাটির তৈজসপত্র ছিল একমাত্র ভরসা। এখন এর বদলে জায়গা করে নিয়েছে ম্যালামাইন, অ্যলুমিনিয়াম ও চিনামাটির পাত্র। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসা পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প নতুন রূপে ফিরে এসেছে। শুধু বাসনকোসনই নয়, মাটির নানা শৈল্পিক ফুলদানি, খেলনা, টেরাকোটা, মাটির ওপর খোদাই করা শৈল্পিক অলঙ্করণ ইত্যাদির বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে নানা দেশে। এ কারণে বংশপরস্পরা পেশায় এখনো আকড়ে থাকতে পারছেন পটুয়াখালীর মৃৎশিল্পিরা। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় ও বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন সমস্যায় দিন পার করছে শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর ও কর্মচারীরা। সরকারি সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিসিকের কর্মকর্তা। দেশের সর্ব দক্ষিণে সাগরকন্যা খ্যাত দ্বীপ জেলা পটুয়াখালী। জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা বাউফলে রয়েছে প্রাচীনকালের নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বাউফল উপজেলার পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বলরাম পালের ছেলে কমল পাল। বংশপরম্পরায় স্মৃতি আর বাপদাদার স্বপ্ন পূরণে পেশার হাল ধরেন তিনি।
বাউফলের মদনপুরা ইউনিয়নের পালপাড়া মাটির পণ্যের জন্য পরিচিত প্রায় ১০০ বছর ধরে। বৈশাখী মেলায় এখানকার তৈরি মাটির খেলনা বিক্রি হতো। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আর নকশার আধুনিকতায় এর বাজার ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকাতেও। এখন আর শুধু খেলনা নয়, মাটির তৈরি ফুলদানি, ডিনার সেট, কাপ-পিরিচ, মগসহ বিভিন্ন শো-পিস তৈরি হয়। যার বাজার রয়েছে ঢাকার আড়ংসহ বিভিন্ন মার্কেটে। এর ফলে ফিরেছে প্রাণ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে পাখা মেলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। রতন পালের বাড়ির প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে যেন চলে শিল্পকর্ম। কাজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সকাল থেকেই কারিগরদের নৈপুণ্যতায় প্রথমে মাটি মুল্ডিং করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। পরে মাটির পরিমাপ, পণ্যের রূপ, নকশা, পলিশ এবং রৌদ্দে শুকানোর পর নানা রঙের আচরে রাঙিয়ে তোলা হয় পণ্যটি। আর সবশেষে প্যাকেজিং করেই কাজের ইতি টানেন।
সরকার যদি আমাদের দিকে সদয় দৃষ্টিতে চাইতেন তাহলে কারখানাকে আমরা বড় করে প্রজেক্টে নিতে পারতাম। যে প্লাস্টিক শরীরের দুর্গতি বাড়ায় ভালো কিছু হয় না। শরীরে বিভিন্ন রোগের কারণ হচ্ছে এ প্লাস্টিকের কারণে। মাটি এমন একটা জিনিস। মাটির পণ্যে হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। মাটির পণ্যে ভাত খান য্যা খান কোনো ক্ষতি নেই উপকার ছাড়া। আমাদের যে কয়টা কারখানা আছে চৈত্র মাসে আমরা মাল বেশি বানাইতেছি। ব্যবসার সঙ্গে আমার কারখানা আছে দোকানেও সময় দেই কারখানায় সময় দেই।
আমাদের এখানে ৫০ থেকে ৬০ ফ্যামিলি আছে। আমাদের তৈরি পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু আমরা অফিশিয়ালভাবে দেই। আমরা সরাসরি বিদেশে দিতে পারি না বলে সে রকম লাভবান হতে পারি না। আমাদের মালগুলো সরকার নেয় তাহলে লাভবান হতে পারব। আমরা আগে পালেরা তৈরি করতাম এখন বিভিন্ন জাতি লিপ্ত হইয়া গেছে তারাও এই কাজ করে।
পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী-শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। শ্রমিকরা এখান থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করেন। আর তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন মাটির সামগ্রী দেশে তো বটেই ঠাঁই নিয়েছে ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইউকে, আমেরিকা, স্পেন ও জাপানসহ ২৪টি দেশে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক আলমগীর সিকদার জানান, কালের আবর্তনে বাজারে পুরোনো জিনিসের কদর না থাকায়, এখন তৈরি করেন আধুনিক সব সামগ্রী। আর বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ব্যবসার পরিধি বড় করতে পারছেন না তারা। তবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিসিকের এই কর্মকর্তা।
"