ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ০৩ আগস্ট, ২০২৪

ধামরাইয়ে পিটিয়ে হত্যা

২৫ দিনেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি নিহতের পরিবারে হতাশা

ঢাকার ধামরাইয়ের নান্দেশ্বরী এলাকায় ব্যাটারি চুরির অপবাদে ফজলুর রহমান ফজু (৩৫) নামে এক যুবককে কারেন্টের শক ও পিটিয়ে হত্যা অভিযোগে আটজনের নাম উল্লেখ্য করে এবং ৫-৬ জনকে বেনামি আসামি করে ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের মা আছিয়া বেগম। থানায় মামলা হওয়ার ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি ধামরাই থানা পুলিশ। এতে সুবিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে হতাশায় ভুগছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এতদিনেও কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার অনেকে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে পুলিশের ভূমিকা অনেকটাই রহস্যজনক বলে দাবি তাদের। নিহত ফজলুর রহমান আমতা ইউনিয়নের বাউখন্ড গ্রামের মোন্তাজ উদ্দিনের ছেলে। তাকে হত্যার ঘটনায় গত ৭ জুলাই মামলা হয়।

এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামিরা হলো- আমতা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মো. আলকেছ আলী, মো. মীর হোসেন, মো. আলতাফ হোসেন, মো. আলামিন হোসেন, ছোট আলামিন, আইয়ুব আলী, রতন আলী ও শফিকুল ইসলাম। অভিযুক্ত আসামিরা সবাই ইটভাটার মাটির ব্যবসায়ী।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আমতা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আলকেছ আলী, মীরহোসেন, আলামিন, আলতাব হোসেন, আইয়ুব আলী, ছোট আলামিন, রতন ও শফিকুল মিলে ইটভাটার মাটির ব্যবসা করেন। রাতের বেলায় মাটি কাটার ভেকু রেখে সবাই বাড়ি চলে যায়। বৃহস্পতিবার রাতেই মাটিকাটার ভেকু থেকে ব্যাটারি চুরি হয়। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মানিকগঞ্জে সেই ব্যাটারি বিক্রি করতে গিয়ে বাউখণ্ড এলাকার মান্নান নামে এক যুবক সেখানে ধরা পড়ে। এই খবর আমতা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশরাফ আলীকে মানিকগঞ্জ থেকে দোকানদার ফোন করে জানান। সেই খবর ইউপি সদস্য আশরাফ আলী মাটি ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য আলকেছ আলীকে জানান। ইউপি সদস্য আলকেছ সঙ্গে সঙ্গে আলামিন, রতন ও আইয়ুব আলীকে মানিকগঞ্জ পাঠায় চুর ও ব্যাটারি উদ্ধার করার জন্য। পরে আলামিন, রতন ও আইয়ুব মানিকগঞ্জ গিয়ে চুর মান্নানকে ব্যাটারিসহ আটক করে নান্দেশ্বরী গ্রামে নিয়ে আসে। এরপর মান্নানকে জিজ্ঞাসা করলে সে বাউখণ্ড গ্রামের মৃত মোন্তাজ উদ্দিনের ছেলে ফজল হক নাম বলে। সেই সঙ্গে মান্নানের ফোন দিয়ে ফজুকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করে কোথায় আছ বললে ফজু বলে আমি বাউখন্ড গ্রামের গাজী পাথর এলাকায় আছি। তখন আলামিন রতন ও আইয়ুব দ্রুত সেখানে গিয়ে ফজল হক ফজুকে ধরে মারধর করতে করতে নান্দেশ্বরী মাদরাসা দক্ষিণ পাশে আলামিনের অস্থায়ী অফিসে নিয়ে ফজু ও মান্নানকে বেঁধে মারধর করেন এবং কারেন্টের শক দেয়। এরপর তারা ফজুর দুই হাত ও পা ভেঙে ফেলে। অবস্থার বেগতিক দেখে বড়নারায়নপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আশরাফ আলীকে খবর দিয়ে তার জিম্মায় ফজল হক ফজু ও মান্নানকে ছেড়ে দেয়। পরে ফজলহক ফজু বাড়িতে যাওয়ার পর বমি করতে করতে মারা যায়। অন্যদিকে মান্নানকে মুমূর্ষু অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নিহতের মা আছিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘২৫ দিন পার হলেও খুনিরা কেউ গ্রেপ্তার হলো না। ইউপি সদস্য আশরাফকে পাঠিয়ে খুনিরা আপসের কথা বলে। আমার ছেলেকে যারা পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে শক দিয়ে হত্যা করেছে, অবিলম্বে সেই খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি। বাবা হত্যার কঠোর বিচার দাবি করে ফজুর একমাত্র কন্যা ফরিদা আক্তার বলেন, খুনিরা সবাই অনেক প্রভাবশালী, তাদের অনেক টাকা, সেই কারণে তাদের পুলিশ ধরছে না। আদৌ বিচার পাব কি না আল্লাহই জানে। খুনিদের এমন শাস্তি চাই, তা দেখে কারো বাবা যেন এভাবে নির্যাতনের স্বীকার না হয়।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধামরাই থানার এসআই আশরাফ হোসেন বলেন, ফজু হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। খবর পাওয়া মাত্র আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তাই একটু সময় লাগছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারী আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টায় অভিযান অব্যাহত আছে। খুব দ্রুত আসামিরা গ্রেপ্তার হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close