প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
তিন স্থলবন্দরে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য
আখাউড়া বেনাপোল ও সোনামসজিদ বন্দর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, যশোরের বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে প্রথমে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ এবং পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হলে এসব বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নেমে আসে স্থবিরতা। প্রায় চার-পাঁচদিন পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হলে বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করে। তবে এ সময়ের মধ্যে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু পচনশীল পণ্য আনা-নেওয়া করা হলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়া স্থলবন্দরের স্থবির বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ২৫ জুলাই বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৯ টন হিমায়িত মাছ ও ৪ টন স্টিল পণ্য। তবে ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে বিল অফ এক্সপোর্টের কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে।
জানা গেছে, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় গত ২০ জুলাই থেকে স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়া কারফিউর কারণে রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো আটকা পড়ে বিভিন্ন স্থানে। ২০ জুলাই মাত্র সোয়া ৯ টন হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয় ভারতে। পরদিন ২১ জুলাই রপ্তানি হয় মাত্র ৭০ টন সিমেন্ট। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ম্যানুয়ালি বিল অফ এক্সপোর্ট সংক্রান্ত তথ্যগুলো লিপিবদ্ধের কাজ শুরু করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভারতের আগরতলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ম্যানুয়ালি লিপিবদ্ধকৃত বিল অফ এক্সপোর্টের নথি গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় রপ্তানি বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ফলে ২২ জুলাই বন্দর ভারতে
কোনো পণ্যই রপ্তানি হয়নি। পরে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের অনুরোধে পচনশীল দ্রব্য হিসেবে শুধুমাত্র মাছ গ্রহণে সম্মত হয় আগরতলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতিদিন অন্তত ১ কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৪ জুলাই বিকেল থেকে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হলে স্বাভাবিক হতে থাকে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এ দিন ভারতে রপ্তানি হয় প্রায় ২৬ টন হিমায়িত মাছ।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান জানান, কারফিউর কারণে দূরদূরান্ত থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো বন্দরে আসতে পারেনি। এছাড়া আগরতলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ম্যানুয়ালি লিপিবদ্ধ করা বিল অফ এক্সপোর্টের তথ্য গ্রহণ না করায় মাছ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য রপ্তানি করা যায়নি। এতে রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, চলতি সপ্তাহে পণ্য রপ্তানি কিছুটা কম হয়েছে। তবে এখন গতি ফিরতে শুরু করেছে স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে।
বেনাপোল (যশোর) : ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান হলেও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে এর প্রভাব পড়ছে আমদানি ও রপ্তানিতে। গত কয়েক দিনে এ বন্দর দিয়ে কমেছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় গত ১৮ জুলাই থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকে। এখনো যশোরের বেনাপোল বন্দর ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক।
আমদানি-রপ্তানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান (জিয়া) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ ট্রাক পণ্যবোঝাই দেশে আমদানি করা হয়। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৫০টি ট্রাক প্রবেশ করছে। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি হয়েছে। এই কয়দিন বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা কম হয়েছে। তবে ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল হলে পুরোদমে দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভারতের পেট্রাপোল স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার সময় থেকে এসব ট্রাক আটকা পড়ে। গত শনিবার থেকে ট্রাক বেনাপোল বন্দরে লাইন দিয়ে প্রবেশ করছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, এখন ইন্টারনেট চালু হয়েছে। তবে ধীরগতির কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে, দু-চার দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তখন দুদেশের বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চেকপোস্ট কার্গো শাখার মো. মাসুদুর রহমান (সুপার) জানান, মূলত বাংলাদেশ-ভারত আমদানি রপ্তানির কাগজপত্র অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়। আমরা রেজিস্ট্রার খাতায় হাতে লিখে রাখি। পরে ইন্টারনেট চালু হলে তা সিরিয়াল মতো এন্ট্রি করি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : কোটা সংস্কার আন্দোলনে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম। এখানকার ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। এদিকে দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার কারণে দুদিন বন্ধ ছিল এই স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর ছিল সোনামসজিদ। নানা কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় এই বন্দরটির অবস্থান এখন দ্বিতীয়। এই স্থলবন্দর দিয়ে পাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, গো-খাদ্যসহ আরো বিভিন্ন ধরণের পণ্য আমদানি করা হয় ভারত থেকে। দেশজুড়ে জালাওপোড়াও হলেও এই বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। তবে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে অস্থিরতা, কারফিউসহ সাধারণ ছুটির কারণে দুই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে শ্রমিকরা বিপাকে পড়েন।
শ্রমিক সেরাজুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোনো সমস্যা হয়নি আমাদের। কিন্তু দুই দিন বন্ধ থাকায় আমরা কাজ না পেয়ে বসে অলস সময় পার করেছিলাম। সাধারণত আমরা এখানে কাজ করলে দৈনিক মজুরি চুক্তিতে কাজ করে থাকি। এক দিন কাজ না পেলে পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে গেলে আমরা স্বস্তিতে কাজ করছি।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান, গত ২২ ও ২৩ জুলাই রাতে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব পড়েনি এখানে। কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেনি।
এদিকে বন্দরের সঙ্গে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক ছিল। তারা কোনো রকমের ভোগান্তির শিকার হননি বলেও জানিয়েছেন এই ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা জাফর ইকবাল। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ছাত্র আন্দোলনের সময় এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক ছিল। কোনো ধরণের ঝামেলা হয়নি।
"