বগুড়া প্রতিনিধি

  ০৩ আগস্ট, ২০২৪

উদ্যোক্তা

মাসে ৩ লাখ টাকার আচার বিক্রি করেন আফসানা

আচারের নাম শুনলেই জিভে জল আসে। খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনতে আচারের জুড়ি নেই। এই আচারের সঙ্গে যদি মাংস মেশানো হয়- তাহলে এর স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণ। এমন মুখরোচক মাংসের আচার তৈরি করে বাজারজাত করছেন বগুড়ার নারী উদ্যোক্তা আফসানা নীরা। নিজের মোবাইল ফোন বিক্রির ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন মাসে আয় ৩ লাখ।

বাজার থেকে ভালোমানের মাংস কিনে এনে তা থেকে হাড় ও চর্বি বাদ দিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে চুলায় মাংস সেদ্ধ করে হরেক রকমের মসলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মাংসের আচার। পানির ব্যবহার নেই বললেই চলে, খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করে আচারের স্বাদ আরো বেড়ে যায়। এই আচার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আচার তৈরি করেই স্বনির্ভর হয়েছেন উদ্যোক্তা আফসানা নীরা। মাংসের আচারের পাশাপাশি রসুন, আম, বড়ই, জলপাইসহ বিভিন্ন ফলের আচার তৈরি করছেন তিনি। সহযোগিতা পেলে বড় আকারের কারখানা গড়বেন, দেশের বাইরেও পাঠাতে চান তার আচার। বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী এলাকার বাসিন্দা আফসানা নীরা। ২০২০ সালে করোনাকালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বামী সিহাবুর রহমানের চাকরি চলে যায়। তখন তাদের সংসারে অভাব নেমে আসে। কিভাবে সংসারে সচ্ছলতা আনা যায় তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করেন। স্বামীর পরামর্শে রান্নাবান্না থেকেই ব্যবসার পরিকল্পনা, আর সেই থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা।

উদ্যোক্তা আফসানা নীরা জানান, শুরুটা ভালো ছিল না, উপায় না পেয়ে মুঠোফোন বিক্রি করে দেন। হাতের স্মার্ট ফোন বিক্রির সাড়ে চার হাজার টাকা আর হাতে থাকা পাঁচশ টাকা দিয়ে ব্যবসার যাত্রা শুরু। প্রথমে আচার বিক্রি কম হলেও এখন আফসানা ব্যস্ত থাকেন আচার তৈরি ও বিক্রি নিয়ে। আচারি ফুড নামে অনলাইন পেজে প্রচার করে ব্যাপক সাড়া পান তিনি। তিনি ও তার স্বামী এই অনলাইন পেজে তাদের আচারের প্রচারণা করে থাকেন। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আচারের অর্ডার আসতে থাকে। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছেন প্রশিক্ষণ।

তিনি জানান, ছুটির দিন ছাড়া মাসজুড়ে ১শ কেজি গরুর মাংসের আচারসহ অন্য আচার বিক্রি করেন ১ হাজার কেজিরও বেশি। তার কাজে সহযোগিতা করে স্বনির্ভর হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন নারী। মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার আচার বিক্রি করেন। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে আচারের কারখানা গড়ে দেশের বাহিরে পাঠাতে চান আচারি ফুডের আচার। তবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, মাসজুড়েই আচার তৈরি করেন, বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই চলছে পরিবার। নারী উদ্যোক্তার স্বামী সিহাবুর জানান, আচার বিক্রি করেই তারা বেশ ভালো আছেন, ফুড ডেলিভারি অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন ছাড়াও তাদের আচার বাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয়, গোটা দেশেই তারা আচার পাঠান, ডেলিভারি চার্জ ফ্রি বলে জানান তিনি।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বগুড়ার উপপরিচালক মো. তোছাদ্দেক হোসেন বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফসানা এখন সফল উদ্যোক্তা, শহরে নিজ বাড়িতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এতে নারী সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তি ও নারী নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, অনেকেই তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বেকার যুবকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তাদের ঋণসুবিধাও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close