শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) ও ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
গুলিতে নিহত শিশু আহাদ ও সাব্বিরের পরিবারে মাতম
কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেমে গেছে। হয়তো বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া স্থাপনা নির্মিত হবে। সবকিছুতে ফিরে আসবে চিরচেনা রূপ। কিন্তু নিষ্পাপ, বাড়িময় কোলাহল করে শিশুপুত্র আহাদের কথা কি ভুলতে পারবে তার পরিবার? তার নির্মল হাসি আর কচিমুখের মিষ্টিকথা কি ভুলতে পারবেন মা-বাবা? সরেজমিনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পুখুরিয়া গ্রামে আহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। গত ১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় আট তলা ভবনের বারান্দায় বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল শিশু আহাদ (৪)। বাবা-মা পাশেই ছিলেন। বাসার নিচে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের দৃশ্য দেখছিল সবাই। হঠাৎ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে শিশু আহাদ। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে রক্তে ভিজে যায় বাবান আবুল হাসান ও মা সুমি আক্তার। আহাদের ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরে আটকে যায়। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নিতে বিরূপ পরিবেশ পাড়ি দিতে হয়। পরের দিন নিষ্পাপ নিথর দেহটি নিয়ে একেবারে নির্বাক হয়ে যান মা-বাবা।
নিহত শিশু আহাদের চাচা মোকলেসুর রহমান বলেন, আমার ভাই আবুল হাসান রায়েরবাগ এলাকায় ১১ তলা বিল্ডিংয়ের আট তলায় তার স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদকে নিয়ে বসবাস করতেন। আমার ভাই সে ঢাকা আয়কর বিভাগে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদাহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে আমার ভাই, ভাবি ও ভাতিজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাসার নিচে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে চলা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার দৃশ্য দেখছিলেন। হঠাৎ ভাতিজা আহাদের ডান চোখে গুলি লাগে। রক্তাক্ত আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে আইসিইউ লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরদিন শনিবার রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আহাদ। রবিবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর আহাদের মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পুখুরিয়ায় নিয়ে আসা হয়। রাতেই বাড়িতে দাফন করা হয় আহাদকে।
এদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপার সাব্বির হোসেন (২৩) কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের আমোদ আলীর ছেলে। সন্তান হারিয়ে মা রাশিদা খাতুনের কান্না থামছেই না। সারাক্ষণ ছেলের কথা বলে আহাজারি করছেন তার মা-বাবা ও পরিবারের লোকজন।
গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ওষুধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাব্বির হোসেন। পরদিন তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মির্জাপুর গ্রামে সাব্বিরদের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, আমোদ আলী ও রাশিদা খাতুনের তিন সন্তানের মধ্যে সাব্বির সবার বড়। সুমাইয়া খাতুন (১৭) ও সাদিক হোসেন (১২) নামে সাব্বিরের ছোট দুই ভাই-বোন আছে। বাবা আমোদ আলীর নিজের কোনো কৃষিজমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালান তিনি।
আমোদ আলী বলেন, তার ছেলে কোনো রাজনীতি করতেন না। বাঁচার জন্য টাকা উপার্জন করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখানেও সাব্বির কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যায়নি। জ্বর হওয়ায় অসুস্থ শরীরে ওষুধ কিনতে বাইরে যায়। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান। মা রাশিদা খাতুন জানান, সাব্বিরের বাবা এখন কাজ করতে পারেন না। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সাব্বির সংসারের হাল ধরেছিল। সাব্বিরের মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অসহায়। তিনি সন্তান হত্যার বিচার চান।
"