প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৫ জুলাই, ২০২৪

নামছে বন্যার পানি বেরিয়ে আসছে ক্ষত

বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো খুলতে শুরু করেছে * ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বিভিন্ন সড়ক। বন্যার পানি কমতে থাকায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে সড়কের ক্ষত, খানাখন্দ। এছাড়া সিরাজগঞ্জে বন্যার কারণে বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো খুলতে শুরু করেছে। ছড়িয়ে পড়ছে সর্দি-কাশিসহ রোগবালাই।

এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল রবিবার জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি সমতলে কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে, গঙ্গা নদীর পানি সমতলে বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতলে স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসংলগ্ন কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমছে, দুধকুমারসংলগ্ন কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যার উন্নতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মহানন্দা ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমছে, একই এলাকার আত্রাই নদীসংলগ্ন সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) : কয়েক দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বিভিন্ন সড়ক নিমজ্জিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমতে থাকায় সড়কের সেই ক্ষত বেরিয়ে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে গর্ত, দেখা যাচ্ছে সড়কের খানাখন্দ। এখনো পুরাপুরি যাতায়াতের উপযোগী হয়নি এসব সড়ক। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কে ইছগাঁও গ্রামের পাশে কাটাখাল সেতুর পাশের সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক দিন এখানে বড় মালবাহী ট্রাক আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গর্তের কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনার কথা জানান স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একটি ট্রাক গর্তে পড়ে উভয় পাশে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয়রা গাড়ির সাহায্যে এই ট্রাক গর্ত থেকে তুললে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের গোতগাঁও ব্রিজের একাংশের এপ্রোস ধসে গিয়ে বিপজ্জনক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। ক্রমান্বয়ে দেবে যাচ্ছে ওই ব্রিজের এপ্রোস।

গোতগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আলাল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে ব্রিজের এপ্রোস দেবে যাচ্ছে, গত তিন দিন ধরে ব্রিজটির একাংশের এই অবস্থা, দুর্ঘটনা এড়াতে গর্তে সিগনাল দিয়ে রেখেছি।

এ ব্যাপারে সওজ সড়ক বিভাগ সুনামগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রাং-এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের লোক কাজে যাচ্ছে। প্রত্যেক দিন তো বৃষ্টি হচ্ছে, এজন্য কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা গর্তগুলো ভরাট করে দিচ্ছি। আমাদের এই কাজ চলমান থাকবে। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমছে। কয়েক দিনে যমুনার পানি কমলে নতুন করে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এখনো বন্যাকবলিত এলাকা সিরাজগঞ্জ, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুরের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এই সময় ছড়িয়ে পড়েছে রোগবালাই।

বানভাসি সদর উপজেলা পাইকপাড়া ও চর মালশাপাড়া মহল্লার আফজাল, রাম চন্দ্র কুন্ড, সুফিয়া বেগম ও হাসনা হেনা জানান, বাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করলেও এখনো কাদা পানির মধ্যে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতে হয়। পরিবারের অনেকের পেটের পীড়া, পায়ে ঘা, সর্দি এবং জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া রান্নাবান্নাসহ গবাদিপশু নিয়ে তাদের দুর্ভোগ কমেনি। বিতরণকৃত ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর জানান, জেলার ৬,৫২৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, বীজতলা, পাট, তিল, কলা ও মরিচ, বিভিন্ন সবজিখেতে পানি ওঠায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ কমে গেছে।

বন্যাকবলিত ১১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত থাকায় এর মধ্যে ৯৭টি প্রাইমারি স্কুলে পাঠদান বন্ধ ছিল। এদিকে বন্যার পানি কমার কারণে এর মধ্যে ৪৯টি প্রাইমারি স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। ওইসব স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় বরাদ্দপ্রাপ্ত ত্রাণ চাল ১৩০০ টন। নগদ টাকা ২৫ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ১ হাজার প্যাকেট বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close