চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল
সৌদি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ভিড়েছে ব্যবসায় আসবে গতি
বিদেশি অপারেটরের অধীন প্রথম জাহাজ মায়ের্কস ধাবাও * জাহাজটি রপ্তানি পণ্য এবং খালি কনটেইনার পরিবহন করবে
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো বিদেশি অপারেটর পরিচালিত টার্মিনালে গতকাল সোমবার প্রথম জাহাজ ভিড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) চুক্তি ভিত্তিতে সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের পরিচালনায় মায়ের্কস ধাবাও জাহাজটি পিসিটির জেটিতে ভেড়ে। এ দিন বিকেলে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল আরএসজিটি পরিচালিত পিসিটিতে জাহাজটি আনা হয়। এর মধ্য দিয়ে পিসিটির অপারেশন কার্যক্রম শুরু হলো। সূত্র জানিয়েছে এরমধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো গতিশীল হবে। এ উপলক্ষে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলসহ বন্দর, আরএসজিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাহাজটি পিসিটি থেকে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ও খালি কনটেইনার নিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘মায়ের্কস দাবাও’ নামের একটি কন্টেনার ভ্যাসেল সোমবার সকালের জোয়ারের সময় জেটিতে ভিড়ানো হবে। খালাস করা হবে আমদানি পণ্যবোঝাই কন্টেনার। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজটি গত শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে চট্টগ্রাম এসেছে। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৫ দশমিক ৯৯ মিটার ও ড্রাফট (পানির নিচে থাকা অংশ) ৯ মিটার। সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) এখন পতেঙ্গ বন্দর টার্মিনালটি পরিচলনা করবে। তাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুবিধা হবে। গতি আসবে।
সূত্র জানায়, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা উপকূলে নির্মিত হয়েছে পিসিটি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সৌদি আরবের আরএসজিটি এ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তারা শর্তসাপেক্ষে আগামী ২২ বছর টার্মিনাল পরিচালনা করবে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আরএসজিটির সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়। এই টার্মিনালে এখন কেবলমাত্র ক্রেনযুক্ত জাহাজই বার্থিং দেওয়া হবে। গ্যান্ট্রি ক্রেন এসে গেলে সব ধরনের জাহাজ বার্থিং দেওয়া হবে।
এর আগে একটি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানিয়েছিলেন, সব সরঞ্জাম সংগ্রহ করে পিসিটি পূর্ণ সক্ষমতায় যেতে আরও এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। শর্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করবে দায়িত্ব পাওয়া বিদেশী প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চার্জ পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মিত এই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর গত ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের (আরএসজিটিআই) কনসেশন চুক্তি সই হয়। চুক্তির পর থেকেই পিসিটির অপারেশনাল কার্যক্রম চালুর জন্য জোর প্রস্তুতি নেয় আরএসজিটি। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি, লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করতে আরো প্রায় সাত মাস ব্যয় হয়।
সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী মায়ের্কস ধাবাও পিসিটির জেটিতে ভিড়লেও জাহাজটি এসেছে গত ৮ জুন। জাহাজটি ওইদিন দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্র্থের ৯ নম্বর জেটিতে ১ হাজার ৭৪৭ একক কনটেইনার নিয়ে ভিড়েছিল। সেখানেই বর্তমানে অবস্থান করে জাহাজটি আমদানি কনটেইনার খালাস করছে। গতকাল সোমবার বিকেলে জাহাজটি পিসিটির জেটিতে আনা হয়। কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করে রেড সি গেটওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেড গতকাল থেকে কাজ শুরু করলো।
সূত্রমতে, এখানে সমুদ্রের গভীরতা বেশি থাকায় ভিড়ানো যাবে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জাহাজ। ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারবে অনায়াসে। এর আগে ২০০ মিটার লম্বা একটি জাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে জেটিতে আনা হয়েছিল। পিসিটি’র মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর পেতে চলেছে নতুন কন্টেনার টার্মিনাল। এর আগে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল নির্মিত হয়েছিল ২০০৬ সালে।
যদিও এই পতেঙ্গা কনটেইনার টর্মিনালে ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার বাংলাদেশি পতাকাবাহি জাহাজ ‘মেঘনা ভিক্টোরি’ উদ্বোধনের সময় ভিড়েছিল। তারও আগে সরকারি চাল বহনকারী কয়েকটি কার্গো জাহাজও এই টার্মিনালে ভিড়েছিল এবং চাল খালাস করেছিল। তবে এখন আরএসজিটি কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের পরিচালিত প্রথম জাহাজ ভিড়বে এই জেটিতে।
"