মো. শাহ আলম, খুলনা
আ.লীগের ৪, বিএনপির ২ জন হেভিওয়েট
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান সম্ভাব্য চার নেতা। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন দুই নেতা। মূলত এদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা হবে। এছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাসদের প্রার্থীদেরও নাম আলোচনায় রয়েছে।
শিল্পাঞ্চলখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত খুলনা-৩ সংসদীয় আসন। ভৈরব নদের তীরঘেঁষা খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে এ সংসদীয় আসন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ বিভিন্ন বন্ধ মিল চালু ও বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এ এলাকা। এই সংসদীয় এলাকায় যেকোনো নির্বাচন বা রাজনীতিতে শ্রমিকরা বড় ফ্যাক্টর।
১৯৭৯, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে এ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আশরাফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সবশেষ তিন সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে রাজত্ব করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ও বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং দীঘলিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত এই আসন। এটি জাতীয় সংসদের ১০১তম আসন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ৮২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮২ ও নারী ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৩০০ জন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী যথাক্রমে হাসিন বানু শিরিন এবং আবদুল গফফার বিশ্বাস। ১৯৯১ সালে এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন। তবে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হন বিএনপির দলছুট নেতা সেকেন্দার আলী ডালিম। আর ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি আবার দখল করেন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন।
খুলনায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলছে প্রায় সর্বত্র।
প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহিদ আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিসেবে বর্তমান এমপি মুন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিকদের কাছে নেতা নয়, ‘ভাবি’ বা ‘বু’ হিসেবে পরিচিত। অনেকে তাকে শুধু ‘বু’ বলতেও পছন্দ করেন। তবে গত চার বছর মন্ত্রী থাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ে ঢাকায় অবস্থান করেন ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে বলে অনেকের অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এস এম কামাল হোসেন, দৌলতপুর থানা কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সদ্য বিদায়ি চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী এবং সাবেক ছাত্রনেতা ফারুক হাসান হিটলুও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
গতবার এই আসনের ১১৭টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মন্নুজান সুফিয়ান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুল পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৬০৬ ভোট। ওই নির্বাচনে আরো অংশ নিয়েছিলেন বাসদের তৎকালীন জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, ইসলামী আন্দোলনের মুজ্জামিল হক এবং জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন।
অন্যদিকে আসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন থাকায় এ আসনের জন্য বিএনপি কাণ্ডারী বলে মনে করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলকে। একাদশ নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি খুলনার রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। দলের অনেকে মনে করেন রকিবুল ইসলাম বকুল এখন খুলনা জেলা এবং মহানগরের বিএনপির রাজনীতিতে অন্যতম চেঞ্জমেকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। দল নির্বাচনে গেলে এবারও তিনি প্রার্থী হবেন বলে অনেকটা নিশ্চিত। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির সাবেক প্রথম যুগ্ম সম্পাদক, আশির দশকের ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলামও দল সুযোগ দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।
আর জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের মহানগর শাখার সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল মামুন অথবা কেন্দ্রীয় শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগর শাখার নির্বাহী সদস্য শেখ হাসান ওবায়দুল করিম এবং বাসদের জেলা কমিটির আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টুও প্রার্থী হওয়ার তালিকায় রয়েছেন।
"